সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নি। যাকে মডেল তিন্নি নামেই সবাই চেনেন। ২০০০ সাল থেকেই জনপ্রিয় মডেল হিসেবে তার আকাশছোঁয়া খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। আর এ অসামান্য জনপ্রিয়তার কারণেই তাকে নায়িকা করে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। চলচ্চিত্রের শিরোনাম ছিল ‘বৃষ্টির চোখে জল’। আর এটি নির্মাণ করতে যাচ্ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা বাদল খন্দকার। এতে তিন্নির বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিনয় করার কথা ছিল ছোটপর্দার অভিনেতা শাহেদ শরীফ খানের। চলচ্চিত্রটির মহরতও সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু বিধি বাম। এর শুটিং শুরুর আগেই অপমৃত্যু ঘটে মডেল তিন্নির। ফলে চলচ্চিত্র নায়িকা হিসেবে তিন্নিকে দেখা থেকে বঞ্চিত হন দর্শক। চলচ্চিত্রকারদের কথায়, সুন্দরী ও মেধাবী হিসেবে সহজেই চলচ্চিত্রের নায়িকা হিসেবে দর্শক মন জয় করে নিতে পারতেন তিন্নি। কারণ মডেল হিসেবে ক্যারিয়ারের শুরুতেই সবার নজর কাড়েন তিনি। শুধু মডেল নয়, অল্প সময়ে বেশ কটি টিভি নাটকে অভিনয় করে সেখানেও অভিনেত্রী হিসেবে সমান দর্শকপ্রিয়তা পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বড়পর্দায় যাত্রাটা অধরাই রয়ে গেছে প্রয়াত মডেল তিন্নির।
যেভাবে মডেল হলেন তিন্নি
১৯৭৭ সালের ২২ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিন্নি। ২০০০ সালের কোনো একদিন কেনাকাটা করতে বনানীর একটি শপিং মলে গেলে তার সঙ্গে দেখা হয় জনপ্রিয় অভিনেতা ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা আফজাল হোসেনের। দেখার পর আফজাল হোসেন তাকে মডেল হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন। ইডেন কলেজে ইংরেজি বিভাগে পড়ুয়া তিন্নি এমন সুযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই মডেল হতে রাজি হয়ে যান।। কয়েক মাস পর তিন্নি মডেলিং করেন হেনোলাক্স স্পট ক্রিমের একটি বিজ্ঞাপনে। এক বিজ্ঞাপন দিয়েই তিন্নি পৌঁছে যান হাজারো দর্শকের হৃদয়ে। মডেল হিসেবে একের পর এক অভিনয় করেন স্টারশিপ কনডেন্সড মিল্ক, লিজান মেহেদি, গন্ধরাজ তেল, কোয়ালিটি আইস্ক্রিম, এলিট পেইন্ট, বম্বে উপটান, রিচি ফ্র্রুটস ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনে। মৌ-এর পর তিন্নি হয়ে ওঠেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া মডেল। মাত্র দুই বছরের ক্যারিয়ারে এত সহজে এতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠা আর কারও ভাগ্যে তেমনভাবে জুটেছে বলে জানা যায়নি। ২০০০ সালে আফজাল হোসেনের বিজ্ঞাপনে কাজ শুরুর আগে ১৯৯৯ সালে তিন্নি র্যাম্প মডেলিং দিয়ে শোবিজ দুনিয়ায় তার যাত্রা শুরু করেন।
মডেল হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর নাট্যনির্মাতারা তাকে নাটকে অভিনয় করার প্রস্তাব দিতে থাকেন। তিন্নি অনেক নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও জনপ্রিয় নাট্য পরিচালক মোহন খানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে পারেননি। ২০০২ সালে মোহন খান পরিচালিত ‘মেঘবতী’ নাটকে অভিনয় করেন। এরপর তিনি ধারাবাহিক ‘তখন ছিলাম আমি’ ও ‘সমুদ্র সীমানায়’ নাটকে অভিনয় করেন। তার জনপ্রিয়তা দেখে চলচ্চিত্র পরিচালকরা তাকে ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। জানা গেছে ‘বৃষ্টির চোখে জল’ ছবির আগে বাদল খন্দকারের পরিচালনায় ‘প্রিয় সাথী’ নামে অন্য একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের বিষয়ে পুরোপুরি চূড়ান্ত হন তিন্নি। কিন্তু চলচ্চিত্রে আর অভিনয় করা হয়ে ওঠেনি তিন্নির। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা তিন্নি তার আগেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা নদীর ওপরে অবস্থিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু-১-এর নিচে মডেল তিন্নির লাশ পাওয়া যায়। ১৫ নভেম্বর অজ্ঞাত হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।