আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। এর মধ্য দিয়ে অবসান হবে দীর্ঘ ছয় বছরের প্রতীক্ষার। আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ব্যালটে ভোটযুদ্ধ। শিক্ষার্থীরা আগামী একটি বছরের জন্য নির্বাচিত করবেন তাঁদের প্রতিনিধিদের। এবারের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ নির্বাচন যেমন তোলপাড় সৃষ্টি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, তেমনিভাবে সারা দেশের মানুষ উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে ডাকসু নির্বাচনের দিকে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিপি পদে এবারের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। সহসভাপতির (ভিপি) শীর্ষ এই পদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের আবিদুল ইসলাম খান, ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের সাদিক কায়েম ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের উমামা ফাতেমার মধ্যেই মূল লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে গতকাল শেষ হয়েছে বহুল আলোচিত এই নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। ফলে কেউ-ই আর নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। শেষবারের মতো শিক্ষার্থীদের কাছে ভোটের জন্য আর্জি জানাতে দেখা গেছে প্রার্থীদের।
ছাত্রদল প্যানেলের শপথবাক্য পাঠ : প্রচারণার শেষ দিনে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনের বটতলায় শপথ নিয়েছেন ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। ভিপি প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম এই শপথবাক্য পাঠ করান। এই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদসহ ডাকসু ও হল সংসদের বিভিন্ন পদের ২০৫ জন প্রার্থী শপথবাক্য পাঠ করেন। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতির অবসান, পূর্বসূরিদের মতো লড়াই চালানো, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন, বৈধ সিট-খাবার-স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, অনলাইন সুরক্ষা, আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় গঠন, রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখার মতো আটটি বিষয়ে অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা। পরে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘আশা করছি, একটি সফল ডাকসুর প্রত্যাশা, একটি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যয় থেকে শিক্ষার্থীরাও এই শপথের অংশীদার হবেন।’
এ ছাড়া ভিপি পদে ৪৪ জন, জিএস পদে ১৯ জন এবং এজিএস পদে লড়বেন ২৫ প্রার্থী। এ ছাড়া সম্পাদকীয় পদগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন, ক্যারিয়ার সম্পাদক পদে ১৫ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৭ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১২ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৩ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৪ জন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে ১১ জন, এ ছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্যপদে ২১৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, ভিপি ছাড়া জিএস পদে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের তানভীর বারী হামিম, ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের এস এম ফরহাদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্যানেলের আবু বাকের মজুমদারের মধ্যে। এ ছাড়া এ জি এস পদে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের তানভীর আল হাদী মায়েদ, ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের মুহিউদ্দীন খান ভোটারদের কাছে এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। আটটি কেন্দ্রে মোট ৮১০টি বুথে ভোট হবে। একজন ভোটার সর্বোচ্চ আট মিনিট সময় পাবেন। বিকাল ৪টার মধ্যে ভোট কেন্দ্রের আঙিনায় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ভোট দিতে পারবেন।
ডাকসুতে ভোট গণনায় ব্যবহার হবে স্ক্যানিং মেশিন। দ্রুততম সময়ে ফল প্রকাশ করা হবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ভোটের দিনে নিয়মিত শিডিউলের বাইরে অতিরিক্ত বাস চলাচল করবে ক্যাম্পাসে।
নির্বাচনে অনিয়মের আশঙ্কা, ১০ দফা শিক্ষক নেটওয়ারর্কের : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার আশঙ্কা প্রকাশ করে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সদস্যরা এসব দাবি উত্থাপন করে। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে- প্রবেশপথ বন্ধ না করে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে এবং কারা প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করবে তা প্রকাশ করতে হবে; নারী শিক্ষার্থীদের পরিচয় যাচাইয়ে নারী শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা; পোলিং অফিসার নিয়োগে স্বচ্ছতা; ভোট গ্রহণের সময় বিকাল ৫টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা; পোলিং এজেন্টদের ভিতরে থাকার সুযোগ নিশ্চিত করা; গণমাধ্যমকর্মী ও পোলিং এজেন্টদের জন্য গাইডলাইন প্রকাশ করা; বুথের বাইরে লাইন ব্যবস্থাপনায় শিক্ষক ও অফিসার নিয়োগ; গুজব বা ভুয়া তথ্য ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ; পর্যবেক্ষক ও এজেন্টদের জন্য বিশ্রাম কক্ষের ব্যবস্থা করা এবং অস্বচ্ছতার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে হবে।