অবশেষে সব জটিলতা কাটিয়ে নৌবন্দর হচ্ছে বগুড়ায়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে এ নদীবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এরপর গত ৪৭ বছর বগুড়ায় নদীবন্দর স্থাপনের ফাইলটি ছিল লাল ফিতায় বন্দি। এমনকি বিএনপি আমলেও সেটি নানা কারণে থমকে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭ বছর তো সব উন্নয়ন থেকেই বঞ্চিত হয়েছে জেলাবাসী।
বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীর তীরে নদীবন্দর প্রতিষ্ঠা ও সারিয়াকান্দি থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের মাদারগঞ্জ পর্যন্ত যমুনার নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা অল্প খরচে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের পণ্য পাঠাতে পারবেন। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের লোকজনকে জামালপুর ও ময়মনসিংহ যেতে হলে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। এতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ ফেরি চালু হলে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, শেরপুর পৌঁছা যাবে। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও বৃহত্তর দিনাজপুরের লোকজনকে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে এখনো ১০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ ফেরি সার্ভিস চালু হলে দ্রুততম সময়ে বিকল্প পথে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকা পৌঁছা যাবে।
১৯৭৮ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই নদীবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ দীর্ঘ প্রায় চার যুগ ধরে ফাইলবন্দি থাকলেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সেটি আলোর মুখ দেখছে। সারিয়াকান্দি নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। এতে বলা হয়, বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীর তীরে নদীবন্দর প্রতিষ্ঠার জন্য বগুড়া জেলা প্রশাসক অনুরোধ করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বিআইডব্লিউটিএ হতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি ইতোমধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিলক্ষিত হয় যে, সারিয়াকান্দি নদীবন্দর করা যাবে। এর আগে গত ১৩ জুলাই অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তাফা (জি) সারিয়াকান্দি পৌরসভাধীন কালিতলা নামক স্থানে বন্দর স্থাপন এলাকা পরিদর্শন করেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান, বগুড়া জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় সারিয়াকান্দিতে নদীবন্দর করার কথা তুলে ধরা হয়। সারিয়াকান্দিতে নদীবন্দর চালু হলে এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক পরিবর্তন ও অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। জানা যায়, দেশের উত্তর জনপদের সম্ভাবনাময় শিল্পনগরী বগুড়া। ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক দিয়ে বগুড়ার মানুষকে সৌভাগ্যবানও বলা যেতে পারে। বগুড়ার বুকচিড়ে বয়ে গেছে করতোয়া, নাগর, বাঙ্গালী আর যমুনার মতো বড় চারটি নদী। সারিয়াকান্দি নদীবন্দর চালু হলে এসব নদী পথে যোগাযোগ ও ব্যবসাবাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। হয়ে উঠবে নৌ ও কৃষি বাণিজ্যের হাব। এই নদীবন্দর চালু হলে এটি দেশের ৫৪তম নদীবন্দর। এর মধ্যেই সারিয়াকান্দি পৌরসভাধীন কালিতলা নামক স্থানে সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ নৌবন্দর স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এটি চালু হলে দেশের ৫৪তম নদীবন্দর হবে সারিয়াকান্দি নৌবন্দর। এদিকে বগুড়া নদীবন্দর চালুর খবরে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের বন্যা। যমুনা পাড়ের বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম রাশেদ জানান, অবশেষে আলোর মুখ দেখছে বগুড়ার সারিয়াকান্দি নদীবন্দর। এখানে নদীবন্দর হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই অঞ্চলের কৃষকরা অল্প খরচে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের পণ্য পাঠাতে পারবেন। পরিবহন খরচ কম পড়বে। বর্তমানে এই ঘাট থেকে জামালপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নৌকা চলাচল করে। বগুড়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মোশারফ হোসেন জানান, বগুড়ায় ৪৭ বছর পর বাস্তবায়ন হচ্ছে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন।