জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থান দমনে সারা দেশের ৪১ জেলার ৪৩৮ স্থানে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। আর মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে ৫০টিরও বেশি জেলায়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর নিজের জবানবন্দিতে এ তথ্য তুলে ধরেন। গতকাল বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ প্রসিকিউশনের ৫৪তম সাক্ষী হিসেবে তৃতীয় ও শেষ দিনের মতো দেওয়া নিজের জবানন্দিতে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন।
জবানবন্দিতে তিনি বলেন, বিগত সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই গুম, খুন ও নির্যাতন চালিয়েছে। এর ফলেই জুলাই আন্দোলনে সব শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। এদিন তার জবানবন্দি শেষ হলে পলাতক দুই আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন জেরা শুরু করেন। তার পরবর্তী জেরার জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এ সময় প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামীম, বি এম সুলতান মাহমুদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান প্রমুখ।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার বাকি দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এ মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকালও তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
অন্যদিকে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।আসামিদের মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে : মামলার শেষ সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি শেষে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম সাংবাদিকদের জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলায় ৫৪তম সাক্ষী হিসেবে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার জবানবন্দি প্রদান সমাপ্ত করেছেন। ডিফেন্স কাউন্সিলের পক্ষ থেকে একটি প্রশ্নের মাধ্যমে জেরা শুরু হয়েছে এবং আগামী সোমবার এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার পরবর্তী জেরা চলবে। তিনি বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তকালে ৯২টি ডকুমেন্টারি এভিডেন্স কালেক্ট করেছেন। এগুলো তিনি তার জবানবন্দির সময় উপস্থাপন করেছেন। এ ছাড়া সিডি, ডিভিডি, পেনড্রাইভ ও বিভিন্ন বইসংক্রান্ত ৩৭টি বস্তু প্রদর্শনী দাখিল করেছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ হাজার পৃষ্ঠার ডকুমেন্টারি এভিডেন্স দাখিল করেছেন তিনি।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য ৬ অক্টোবর : জুলাই গণ অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ অব্যহত রয়েছে। গতকাল বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ প্রসিকিউশনের দশম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য থাকলেও এদিন প্রসিকিউশন কোনো সাক্ষী উপস্থাপন করেনি। পরে পরবর্তী সাক্ষ্য উপস্থাপনের জন্য আগামী ৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। গত ২৭ আগস্ট সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। এর আগে ৬ আগস্ট ৩০ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২৪ জুন তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদন দাখিলের পর ৩০ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে ট্রাইব্যুনালে।