বিদ্যুৎ ও পানি সংকট নিয়ে টানা বিক্ষোভে অন্তত ২২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোয়েলিনা তার সরকার ভেঙে দিয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, সহিংসতায় আরও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। দেশটির পরিস্থিতি শান্ত করতে সোমবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোয়েলিনা সরকার ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
নেপাল, ফিলিপাইন, পূর্ব তিমুরের পর মাদাগাস্কারও জেন-জিদের কাছে মাথা নত করল। প্রেসিডেন্ট জনসাধারণের ক্ষোভ স্বীকার করেছেন এবং তার সরকারের ব্যর্থতার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক টেলিভিজিওনা মালাগাসিতে (টিভিএম) তিনি বলেন, সরকারের সদস্যরা যদি তাদের ওপর অর্পিত কাজগুলো সম্পাদন না করে থাকেন তবে আমরা তা স্বীকার করছি এবং ক্ষমা চাইছি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, হতাহতের মধ্যে শুধু বিক্ষোভকারীই নন, সাধারণ মানুষও রয়েছেন; কেউ নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে, আবার কেউ লুটপাট ও গ্যাং সহিংসতায় নিহত হয়েছেন। তবে মাদাগাস্কারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব তথ্যকে ‘গুজব ও ভ্রান্তি’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে, অস্থিরতার সময় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তরুণদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং পানি সরবরাহ সমস্যার কারণে সৃষ্ট ক্ষোভ, দুঃখ এবং অসুবিধাগুলো আমি বুঝতে পারি। আমি আহ্বান শুনেছি, আমি কষ্ট অনুভব করেছি। আমি দৈনন্দিন জীবনের ওপর প্রভাব বুঝতে পেরেছি।
দেশটিতে বিদ্যুৎ ও পানি সংকটের বিরুদ্ধে ‘জেন জি’ নেতৃত্বাধীন আন্দোলন প্রাণহানি ও সহিংসতায় গড়ায়। এর প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া তৃতীয় দফার এ বিক্ষোভ থেকে দেশটির সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি উঠে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দেশটির রাজধানী আন্তানানারিভোতে বিক্ষোভকারী তরুণ-তরুণীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। বলা হচ্ছে, আফ্রিকার কেনিয়া ও এশিয়ার দেশ নেপালের ‘জেন-জি’ আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মাদাগাস্কারে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করেছেন দেশটির তরুণ-তরুণীরা। দেশটিতে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ-প্রতিবাদে রূপ নিয়ে তরুণদের এ আন্দোলন।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক জানিয়েছেন, বিক্ষোভে অন্তত ২২ জন নিহত এবং ১০০ জন আহত হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস ও প্রাণঘাতি গুলি ছুড়ে। তবে ভরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে মাদাগাস্কারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, ব্যাপক গুজব ছড়ানো হচ্ছে বিক্ষোভ ঘিরে। সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান
বিডি প্রতিদিন/এএম