রাজধানীর মহাখালী টিবি গেট পার হয়ে একটু এগোলেই দেখা যায় হঠাৎ এক জায়গায় সংকুচিত হয়ে গেছে ফুটপাত। ফুটপাতের ওপরে ঝুলে থাকা তার বিদ্যুতের খুঁটি বেয়ে কুণ্ডলী পাকিয়ে নেমে এসেছে নিচে। তারের স্তূপের ভিতর দিয়ে একজনের বেশি পার হওয়ার পরিস্থিতি নেই। এটা শুধু রাজধানীর একটি সড়কের চিত্র নয়, অধিকাংশ সড়কের দিকে খেয়াল করলেই চোখ আটকায় তারের জঞ্জালে। ঢাকায় ঝুলন্ত তারের (ওভারহেড ক্যাবল) সমস্যা দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময়ে এই তার নামানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও ঝুলন্ত জঞ্জাল এখনো দূর হয়নি। রাজধানীর সৌন্দর্যবর্ধনে বিদ্যুতের খুঁটিতে বিপজ্জনকভাবে ঝুলে থাকা এসব তার কখনো কখনো সরানো হলেও পরে তা আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে। ফলে বাড়ছে দৃশ্য দূষণ। এসব ক্যাবলের মধ্যে রয়েছে ল্যান্ডফোনের ক্যাবল, ইন্টারনেট ক্যাবল, ডিশ সংযোগের ক্যাবল ইত্যাদি।
জানা যায়, ২০২০ সালের আগস্টে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শান্তিনগর, ধানমন্ডি, সিটি কলেজ, নগর ভবনের চারপাশ, ওয়ারী, মুগদা এলাকার সব ইন্টারনেট ও ডিশ লাইনের তার অপসারণ করে। এ অভিযানের পর প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানায় দেশের ইন্টারনেট সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। তখন ক্যাবল অপারেটরদের চাপের মুখে ঢাকায় ঝুলে থাকা তারের জঞ্জাল কেটে ফেলার অভিযান স্থগিত করে ডিএসসিসি। দুই পক্ষের সমঝোতা বৈঠকের পর পাইলট প্রকল্প হিসেবে ধানমন্ডির ঝুলন্ত তার মাটির নিচে সরিয়ে নিতে রাজি হন ক্যাবল অপারেটররা। সে অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয় করে ধানমন্ডি এলাকার তার মাটির নিচে নিয়ে যান আইএসপিএবিসহ অন্য কেবল অপারেটররা।
ডিএসসিসির মতো একই সময়ে সড়কে ঝুলে থাকা তার অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল ডিএনসিসি। কিন্তু ওই সময় ডিএসসিসির উচ্ছেদের প্রতিবাদে আইএসপিএবির প্রতিবাদ দেখে কিছুটা সময় নেয় ডিএনসিসি। তখন পরিকল্পিতভাবে ঝুলন্ত তার মাটির নিচে স্থানান্তরের লক্ষ্যে নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), আইএসপিএবি ও ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করে ডিএনসিসি। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঝুলন্ত তার সরিয়ে নিতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই উদ্যোগ আর এগোয়নি। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সভাপতি ইমদাদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ধানমন্ডি-১ থেকে ৯ নম্বর রোড পর্যন্ত তিন কিলোমিটারজুড়ে ক্যাবলগুলো আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে গেছি। সেখানে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এখানে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে। সারা দেশে আন্ডারগ্রাউন্ডে তার নেওয়ার এবং ওপর দিয়ে এক তারের মাধ্যমে সব অপারেটরের সেবা (একটিভ শেয়ারিং) পৌঁছানোর জন্য বিটিআরসি বরাবর চিঠি দিয়েছি। কিন্তু বিটিআরসি সেই চিঠির অনুমোদন দেয়নি। তারা অনুমোদন দিলে দ্রুত কাজ শুরু করা সম্ভব।’ রাজধানীতে যেসব ঝুলন্ত তার দেখা যায় এর মধ্যে ল্যান্ডফোনের ক্যাবলও রয়েছে। সরকারের ল্যান্ডফোন (ফিক্সড পিএসটিএন) সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ট্রিপল প্লে সেবা চালু করেছিল। এক ক্যাবলের মাধ্যমে তিন ধরনের সেবা (ভয়েস, ডাটা অর্থাৎ ইন্টারনেট ও ভিডিও) চালু করে ঝুলন্ত ক্যাবলের জঞ্জাল কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিটিসিএল মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার পরে গুলশানসহ রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় এই উদ্যোগ নিয়েছে। মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় ফুটপাতে দেখা যায় তারের জঞ্জাল। প্যাঁচানো তারের সঙ্গে ঝুলছে বিভিন্ন রকমের ব্যানার ফেস্টুন। মগবাজার এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, তারের পরিমাণ বেড়েই চলেছে কিন্তু সরানোর কোনো উদ্যোগ নেই। মাঝে মাঝে তারের ওজন বেড়ে গেলে ছিঁড়ে পড়ার ঘটনা ঘটে।