ঈদুল ফিতরে এবার লম্বা ছুটি মিলেছে চাকরিজীবীদের। ঈদের ছুটি শেষ হতে না হতেই আবার পয়লা বৈশাখের ছুটি। তাই এবার ঈদ পরবর্তী পর্যটন নগরী কক্সবাজারে পর্যটকদের মেলা বসবে। এজন্য কক্সবাজার সেজেছে নতুন রূপে। সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু করে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানপাট সবখানেই চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা ও প্রস্তুতি। পর্যটকদের স্বাগত জানাতে স্থানীয় প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে তথ্যকেন্দ্র ও সিসি ক্যামেরা। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমনের সুযোগে ব্যবসায়ীরা যাতে ‘গলাকাটা’ ব্যবসা না করে এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হয়েছে।
হোটেল-মোটেল মালিকেরা ধারণা করছেন, এবার ঈদের ছুটিতে অন্তত ১২-১৪ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে কক্সবাজারে।
কক্সবাজার চেম্বারের দেওয়া তথ্যমতে, ঈদের ছুটিতে হোটেল-রেস্তোরাঁ, পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ১৩টি খাতে অন্তত ৯০০-১০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে।
সৈকতের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোন ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটক বরণে প্রস্তুতি নিচ্ছেন হোটেল মালিকেরা। রমজানে অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁর সংস্কার করা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন দেড় লাখের বেশি পর্যটক সমাগম ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সমুদ্র সৈকতে পেট্রোল টিমের পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
কক্সবাজারের হোটেল দ্য কক্স টুডের পরিচালক মহিউদ্দিন খান খোকন জানান, ঈদে আগত অতিথিদের জন্য বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট, হাফ বোর্ড ও ফুল বোর্ড প্যাকেজসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় সুবিধা রাখা হয়েছে।
কক্সবাজারের হোটেল বিচ পার্কের ম্যানেজার আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের পরের চারদিনের সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোর জন্যও বুকিং আসছে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, সৈকতের পাড়ের শামুক-ঝিনুক, আচার কিংবা শুঁটকির দোকানগুলোতেও সাজসজ্জার ব্যস্ততা বেড়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জাফর আলী বলেন, ‘পর্যটকদের বরণে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এবার নতুন কিছু স্থানীয় পণ্যও দোকানে রাখা হয়েছে। আশা করছি, ঈদে ভালো বিক্রি হবে।’
পর্যটন ব্যবসায়ী স্যান্ডিবিচের প্রধান নির্বাাহী আবদুর রহমান বলেন, ‘পর্যটকদের বরণে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। টানা ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসবেন। অতিরিক্ত পর্যটকের কারণে হোটেল বুকিং পাওয়া কঠিন হতে পারে, তাই পর্যটকরা অনলাইনে বুকিং দিলে ঝামেলামুক্ত থাকবে।’
কক্সবাজার সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার সিনিয়র লাইফ গার্ড জয়নাল আবেদীন ভূট্টো বলেন, ‘ঈদে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা সৈকতের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করেছি এবং সেখানে পর্যটকদের সতর্ক করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লাল পতাকা দেওয়া হবে। তাই সবাইকে অনুরোধ করছি, লাইফ গার্ডদের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা চাই পর্যটকরা যাতে নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ছুটি কাটাতে পারেন। সমুদ্র সৈকতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা ও পর্যটকদের সেবার মান নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটক হয়রানি এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ঈদের ছুটির ৯ দিনে ৯-১০ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আগামী ১২ এপ্রিল শনিবার পর্যন্ত আরও ৩ দিনে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে।’
রেস্তোরাঁর খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়েছে কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, রেস্তোরাঁ গুলোতে খাবারের মানও বজায় থাকবে। পর্যটকরা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হবেন না।
কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর এই দুই মাসে সৈকত ভ্রমণে আসেন অন্তত ২১ লাখ পর্যটক। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে আসেন ৭ লাখ পর্যটক। এবারের ঈদের ছুটিতে ১২ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পর্যটকের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। চুরি-ছিনতাই রোধে শহরের অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি যানজট নিরসন এবং পর্যটকের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার প্রস্তুতি চলছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত