নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে জয়ের আশায় খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। হামজা দেওয়ান চৌধুরীর দারুণ দুটি গোলের পরও জয়ের দেখা পেলেন না জামাল ভূঁইয়ারা। এবার কী করবেন কোচ হাভিয়ের কাবরেরা? ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ১৮ নভেম্বর খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় সেই ম্যাচে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে জামাল ভূঁইয়াদের। অবশ্য এই ম্যাচ নিয়ে কাবরেরার দুশ্চিন্তাই সবচেয়ে বেশি।
স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ২০২২ সালে জাতীয় ফুটবল দলের দায়িত্ব নেন। এরপর থেকে তার অধীনে ৩৫ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জয় পেয়েছে মাত্র ৯ ম্যাচে। ড্র করেছে আরও ৯টিতে। হেরেছে ১৭ ম্যাচে। সফলতার হার কেবল ২৫.৭১ শতাংশ। গত জুনে ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে জয়ের পর থেকে টানা পাঁচ ম্যাচে জয়ের দেখা নেই বাংলাদেশের। সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হেরেছে ১০ জুন। এরপর কাঠমান্ডুতে গিয়ে নেপালের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছে। হংকংয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ৪-৩ গোলে পরাজয়ের পর অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে গিয়ে হংকংয়ের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছেন জামালরা। এরপর গত বৃহস্পতিবার নেপালের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। নেপালের বিপক্ষে ২০২০ সালের পর থেকে জয়ের দেখা নেই। দলকে জয়ে ফেরানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। হাভিয়ের কাবরেরা এ চ্যালেঞ্জ কতটা নিতে পারবেন? তার
ওপর ভারত আগের চেয়ে বেশ শক্তিশালী দল নিয়েই খেলতে আসছে। ভারতীয় দলে এক অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলার নাম লিখিয়েছেন। রায়ান উইলিয়ামস। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব বাদ দিয়ে তিনি ভারতীয় পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন। ভারতে দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধান না থাকায় রায়ানকে অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট বাদ দিতে হয়েছে। ইংলিশ ফুটবলে বেশ কয়েক বছর খেলেছেন তিনি। পোর্টসমাউথ, ফুলহ্যাম, গিলিংহ্যাম, অক্সফোর্ড ইউনাইটেড, বার্নসলির মতো ক্লাবে খেলেছেন। বর্তমানে খেলছেন বেঙ্গালুরু এফসিতে। ২০২৩ সাল থেকে খেলছেন এই দলে। ভারতীয় পাসপোর্ট পেলেও অস্ট্রেলিয়া, ফিফা ও এএফসির এনওসি পাননি রায়ান। এরপরও তাকে নিয়েই দল ঘোষণা করেছে ভারত। অবশ্য বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘সম্প্রতি ভারতীয় পাসপোর্ট গ্রহণকারী রায়ান উইলিয়ামস বাংলাদেশ যাচ্ছেন। তবে অস্ট্রেলিয়া, ফিফা এবং এএফসির অনাপত্তি পত্র পেলেই কেবল তিনি ম্যাচের দিন দলে থাকতে পারবেন।’ ভারত বড় একটা ঝুঁকিই নিয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে রায়ানের অনাপত্তিপত্র পাওয়া যাবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। গতকাল ভারতের ঘোষিত দলে নেই সুনীল ছেত্রী। গত মার্চে শিলংয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছিলেন সুনীল। অবসর ভেঙে সেই ম্যাচে ফিরলেও তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি ছেত্রী। তবে এবার রায়ান উইলিয়ামস খেলতে পারলে ভিন্ন চিত্র দেখা যেতে পারে। গতকালই ২৩ সদস্যের দল নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন ভারত জাতীয় ফুটবল দলের প্রধান কোচ খালিদ জামিল। তাদের সুন্দর আপ্যায়নের ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। যদিও ভারতে দিন কয়েক আগে গিয়ে অনুশীলন নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল বাংলাদেশকে।
নানা তথ্যপত্র ঘেঁটে জানা গেল, ফুটবলে বাংলাদেশ-ভারত প্রথম লড়াই হয় ১৯৭৮ সালে। সেবার এশিয়ান গেমসে ৩-০ গোলে ভারত জয় পায়। এশিয়ান গেমসে তখন জাতীয় দলই অংশ নিত। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম জয়ের দেখা পায় ১৯৯১ সালে। সাফ গেমসে। সেবার ২-১ গোলে জয় পায় বাংলাদেশ। এরপর ১৯৯৯ সালে আরও একবার ভারতকে পরাজিত করে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। ২০০৩ সালে টাইব্রেকারে জয় পায়। অবশ্য টাইব্রেকারের জয় রেকর্ডে ড্র হিসেবেই দেখানো হয়। সেই হিসেবে বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালের পর আর ভারতকে পরাজিত করতে পারেনি। দীর্ঘদিনের আক্ষেপ কি এবার ঘুচবে? দুই দলের গত দুটি লড়াই ড্র হয়েছে। ২০২১ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ১-১ গোলে ড্র। গত মার্চে গোলশূন্য ড্র। এবার ঘরের মাঠে ভারতকে পেয়ে কী করবেন হামজারা? কোচ কাবরেরা বলছেন, বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল ম্যাচের গুরুত্ব তিনি বেশ বোঝেন। সমর্থকদের আবেগটাও তার কাছে স্পষ্ট। কিন্তু এই আবেগের, ভালোবাসার মূল্য কতটা দিতে পারবেন তিনি?