বাজেটের সংস্কারমুখী দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক বলে মনে হলেও কিছু করব্যবস্থার বাস্তবায়ন শিল্প ও ব্যক্তির ওপর অনিচ্ছাকৃত চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি জাভেদ আখতার। গতকাল ফিকির অফিসে আয়োজিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জাভেদ আখতার বলেন, ইতিবাচক বাজেট লক্ষ্যমাত্রা সত্ত্বেও করের বোঝা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ফিকি সৎ ও নিয়মিত করদাতাদের ওপর অতিরিক্ত করের চাপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, সংশোধিত কর স্ল্যাব অনুযায়ী যেসব বেতনভুক্ত ব্যক্তি মাসে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করেন, তাদের ওপর করের বোঝা ৫০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। একইভাবে, ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আয়ের ব্যক্তিদের জন্য এই কর বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। এ ধরনের কর বৃদ্ধির ফলে নির্দিষ্ট আয়ভুক্ত জনগোষ্ঠীর ব্যবহারের জন্য উপলব্ধ আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে, যা ভোক্তা ব্যয় ও জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
জাভেদ আখতার বলেন, ‘সরকার নিজেই বলেছে এটি প্রবৃদ্ধির বাজেট নয়। করের হার বাড়ানো হয়েছে, অথচ করজাল সম্প্রসারণের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এভাবে ব্যবসায়িক পরিবেশে আস্থা তৈরি হয় না। বিনিয়োগে উৎসাহ দিতে হলে আগে নীতির ধারাবাহিকতা ও বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘গত তিনটি বাজেটেই বিদেশি কোম্পানিগুলোর ওপর করের চাপ বেড়েছে। এবারও কর ব্যয় বাড়বে।’
জাভেদ আখতার আরও বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে এখনো পাকিস্তানের তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগ কম। এটা কেবল বাজেটের কারণে নয়, এর পেছনে আছে নীতির অনিশ্চয়তা, অনুমোদন প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং ব্যবসার সহজীকরণে দীর্ঘসূত্রতা।’
সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি রূপালী হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে শিল্প খাতকে বারবার ধাক্কা দেওয়া হচ্ছে। অথচ বহু প্রতিষ্ঠান কর না দিয়ে ব্যবসা করছে। এনবিআরের প্রধান কাজ হওয়া উচিত ছিল, এসব প্রতিষ্ঠানকে করজালে আনা।’ নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ শতাংশ, কিন্তু এর ব্যাখ্যা নেই। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রায় ৩৯ শতাংশ রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে, যা করহার বাড়িয়ে সম্ভব নয়। বরং করহার কমিয়ে করজাল বাড়ানোই হতে পারে কার্যকর কৌশল।’