মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এমন অপরাধ আর না হয় এ জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এছাড়া, বাংলাদেশে যত গুম, খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে তার বিচার করা এই সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাজধানীর কলেজ রোডে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান। প্রস্তাবিত ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর ওপর এই সভার আয়োজন করে আইন মন্ত্রণালয়।
আসিফ নজরুল বলেন, অনেকে প্রশ্ন করেন- যে আইনগুলো করছেন, পরবর্তী সরকার এসে এগুলো রাখবে কিনা। কারণ এক/এগারো সরকারের আমলেও অনেকগুলো ভালো আইন করা হয়েছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সেগুলো আর রাখেনি।
তিনি বলেন, আমি সবাইকে বলি, পরে যে সরকার আসবে, তারা কমপক্ষে এক হাজার মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে গঠিত ফ্রেমওয়ার্কের মধ্য দিয়ে আসবে। তাদের পেছনে থাকবে ৫০-৬০ হাজার মানুষের আহত হওয়ার স্মৃতি, লাখ লাখ মানুষের কান্না। এত বড় একটা লিগ্যাসির পর আমাদের পরবর্তী সরকার আমাদের এই সংস্কার ভুলে যাবে... এটা আমি কল্পনাও করতে চাই না। আমরা সমস্ত সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সংযুক্ত করতে চাচ্ছি। কখনো তারা যেন বলতে না পারে, এখানে আমাদের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। এই অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গিয়ে মাঝেমাঝে আমাদের সময় লাগে। আপনারা অধৈর্য হবেন না। আমরা আমাদের কাজে অটল রয়েছি। আমরা বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্যতম অপরাধের বিচার করব।
গুম হত্যার চেয়ে ভয়াবহ উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা ঠিকমতো তাদের জন্য দোয়াও করতে পারেন না। তারা বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন তা পরিবার জানে না। আমরা দেখেছি, গুমের শিকার একজনের বাবা বলেছিল... আমি কোনো বিচারও চাই না। শুধু আমার ছেলের কবর কোথায় আছে, তা জানতে চাই।
তিনি বলেন, আমাদের সরকারের যত অগ্রাধিকার রয়েছে, তার মধ্যে গুম, খুন, মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিগত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশের ইতিহাসে যে নৃশংসতম ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার বিচার নিশ্চিত করা অন্যতম। সেজন্য আমরা বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করছি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পক্ষ নিচ্ছি। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নিচ্ছি। একইসাথে আমরা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছি।
আসিফ নজরুল বলেন, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আপনাদের অনেক ধরনের উৎকণ্ঠা থাকে, চিন্তা থাকে যে, এখানে কোনো বিলম্ব করা হচ্ছে, কিনা। আমার মনে হয় না এখানে আমাদের কোনো গাফিলতি রয়েছে। আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই, এটা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটোরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজী, ব্লাস্টের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম ও মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেলিনসহ অনেকে।
বিডি প্রতিদিন/কেএ