শহরের চকচকে জীবন আমাদের যতটা আকর্ষণ করে, ভেতরে লুকিয়ে আছে ততটাই অদেখা ঝুঁকি। নতুন এক গবেষণা বলছে, আধুনিক নগরজীবন মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলছে, এমনকি কমিয়ে দিচ্ছে প্রজননক্ষমতাও। ইংল্যান্ডের লাফবারো ইউনিভার্সিটি ও সুইজারল্যান্ডের জুরিখ ইউনিভার্সিটির বিবর্তনবিজ্ঞানীরা এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ণ মানবজীবনের স্বাভাবিক অভ্যাস পাল্টে দিয়েছে খুব অল্প সময়ে। কিন্তু মানুষের শরীর বা জীববৈজ্ঞানিক কাঠামো এত দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি। এটাকে তারা বলেছেন, ‘এনভায়রনমেন্টাল মিসম্যাচ’ বা পরিবেশের সঙ্গে অসামঞ্জস্য। অর্থাৎ মানুষ মূলত প্রকৃতির জন্য তৈরি। কিন্তু এখন মানুষের পরিবেশ পুরোপুরি বদলে গেছে।
শহরে বসবাস করলে প্রজননস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। দেখা দিতে পারে বন্ধ্যত্ব, কমে যেতে পারে শুক্রাণুর সক্ষমতা। একই সঙ্গে দুর্বল হতে পারে রোগপ্রতিরোধক্ষমতা, বাড়তে পারে অ্যালার্জি ও অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি। এছাড়া মানসিক চাপ, ঘুমের ব্যাঘাত, মনঃসংযোগ কমে যাওয়া—সব মিলিয়ে জৈবক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে।
গবেষণায় বলা হয়, শহুরে কোলাহল, অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনের শব্দ, দূষিত বাতাস ও প্রকৃতির অভাব—এসব মিলেই শরীরকে ক্রমাগত চাপে রাখে। প্রতিদিনের এই চাপ জমতে জমতে উদ্বেগ, হৃদ্রোগের ঝুঁকি, মানসিক ক্লান্তি, এমনকি প্রজননস্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি তৈরি করতে পারে।
বিশ্বজুড়ে জন্মহার কমছে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ বাড়ছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৬৮ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করবে। ফলে এর প্রভাব আরও ভয়াবহ হতে পারে।
গবেষকেরা বিভিন্ন গবেষণা, মাঠতথ্য ও জনস্বাস্থ্য–সম্পর্কিত ডেটা পর্যালোচনা করে দেখেছেন—স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ক্ষেত্রেই শহুরে জীবন মানুষের শরীরকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তারা মনে করেন, জনসংখ্যা ও নগরায়ণ যেভাবে বাড়ছে, মানুষ খুব দ্রুতই প্রকৃতির কাছে ফিরে যেতে পারবে না। তাই আধুনিক শহরজীবন ও মানুষের জীববৈজ্ঞানিক গঠনের এই অসামঞ্জস্য ঠিকভাবে বুঝতে পারলে ভবিষ্যতে নগর–স্বাস্থ্য পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল