হাজার বছরের বরফ যেন খুলে দিচ্ছে অতীতের দরজা। সাইবেরিয়ার আর্কটিক উপকূলে বরফের নিচে জমে থাকা একটি উলি ম্যামথের দেহে (উলি ম্যামথ: বহু হাজার বছর আগে বিলুপ্ত বড় আকৃতির হাতির মতো প্রাণী) বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন অবিশ্বাস্য এক জিনগত উপাদান—প্রাচীন আরএনএ।
প্রায় ৪০ হাজার বছর বরফে জমে থাকা এই ছোট ম্যামথটির নাম ‘ইউকা’। এটা ২০১০ সালে উদ্ধার করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা জানান, ইউকার শরীরে পাওয়া আরএনএ–এর নমুনা এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে পুরনো আরএনএ। গবেষণাটি আন্তর্জাতিক জার্নাল সেলে (Cell) প্রকাশিত হয়েছে।
সাধারণত আরএনএ খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই এত বছরের পুরোনো আরএনএ পাওয়া ছিল অনেকটাই অসম্ভব বলে মনে করা হতো। ম্যামথ নিয়ে বহু বছর ধরে ডিএনএ–ভিত্তিক গবেষণা চলছে। ডিএনএ থেকে বিজ্ঞানীরা ম্যামথ প্রজাতির জিনোমও তৈরি করেছেন। তারা জানেন, আধুনিক হাতির সঙ্গে ম্যামথের সম্পর্ক কত ঘনিষ্ঠ। তবে আরএনএ পাওয়া কঠিন, কারণ এটি ডিএনএ–এর তুলনায় অনেক বেশি নাজুক। আরএনএ জিন সক্রিয় করা এবং প্রোটিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভাইরাস গবেষণাতেও এটি অত্যন্ত জরুরি—যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা করোনাভাইরাস (SARS-CoV-2) শনাক্তকরণে।
সুইডেনের স্টকহোম ইউনিভার্সিটির গবেষক লাভ ড্যলেন বলেন, প্রাচীন আরএনএ থাকলে বরফে আটকে থাকা প্রাণীদের দেহে থাকা বরফযুগের ভাইরাস সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যেতে পারে। যদিও ইউকার দেহে কোনো ভাইরাস পাওয়া যায়নি। এর আগেও কিছু পুরোনো নমুনা থেকে আরএনএ পাওয়া গিয়েছিল—যেমন ২০১৭ সালে ৫,৩০০ বছর পুরোনো বরফ–মমির পাকস্থলীর টিস্যু থেকে।
২০২৩ সালে তাসমানিয়ান টাইগারের ১৩০ বছর পুরোনো নমুনা থেকেও আরএনএ পাওয়া যায়। আরও পুরোনো আরএনএ খুঁজতে গবেষকেরা নজর দেন সাইবেরিয়ার পারমাফ্রস্ট অঞ্চলে, যেখানে বরফ গলে বেরিয়ে আসছে বহু বিলুপ্ত প্রাণীর দেহাংশ। এখানে ম্যামথ ছাড়াও পেয়েছেন তুষারযুগের সাবার-টুথড বিড়ালের বাচ্চা এবং অন্যান্য প্রাণীর সংরক্ষিত টিস্যু।
বিজ্ঞানীরা বলছের, স্থায়ী বরফের নিচে হয়তো আরও বহু যুগের রহস্য লুকিয়ে আছে—প্রাচীন জীবের জিনগত কার্যকলাপ থেকে শুরু করে বহু আগের অদৃশ্য ভাইরাস পর্যন্ত।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল