চীনের বিজ্ঞানীরা এমন একটি ফার্ন গাছের সন্ধান পেয়েছেন, যা স্বাভাবিকভাবেই ‘রেয়ার আর্থ এলিমেন্টস’ (অত্যন্ত মূল্যবান ও দুর্লভ ধাতু)। এটি নিজের শরীরে স্ফটিক আকারে তৈরি করতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই ধাতুগুলো সংগ্রহ করা। কারণ, এগুলো পৃথিবীতে খুব কম পাওয়া যায়, উত্তোলন ব্যয়বহুল এবং খননকার্য পরিবেশের বড় ক্ষতি করে। সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব ধাতু উত্তোলনের নতুন সম্ভাবনা খুলে দিতে পারে।
গবেষকরা জানান, দক্ষিণ চীনে পাওয়া Blechnum orientale নামের সাধারণ এক ফার্ন গাছ ভারী ধাতু শোষণ করার ক্ষমতার জন্য আগে থেকেই পরিচিত। এটি দূষিত পানি ও মাটিতেও সহজে জন্মাতে পারে। কিন্তু এবার দেখা গেছে, এই গাছ শুধু ধাতু শোষণই করে না—নিজের ভেতরেই অতি ক্ষুদ্র স্ফটিক (ন্যানো-সাইজড ক্রিস্টাল) গঠন করে, যার ভেতরে থাকে রেয়ার আর্থ ধাতু।
চীনা অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের ভূ-রসায়নবিদ লিউচিং হে বলেন, এই ক্ষমতা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। তিনি জানান, উদ্ভিদের মধ্যে এমন স্ফটিক তৈরি হওয়া উদ্ভিদবিজ্ঞান ও ভূবিজ্ঞানের জন্য বড় অগ্রগতি।
রেয়ার আর্থ ধাতু আধুনিক প্রযুক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—ইলেকট্রনিক যন্ত্র, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি, গাড়ি, টারবাইনসহ বহু শিল্পে এগুলোর ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু সরবরাহ কমে যাচ্ছে এবং বৈশ্বিক বাজারে রাজনৈতিক ও পরিবেশগত বাধার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে।
গবেষকরা মনে করেন, এই আবিষ্কার ফাইটোমাইনিং (ধাতু উত্তোলনে উদ্ভিদের ব্যবহার) ক্ষেত্রকে এগিয়ে নেবে যা প্রচলিত খননের তুলনায় অনেক পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ উপায়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ফার্নটির ভেতরে যে স্ফটিক পাওয়া গেছে তা মূলত মোনাজাইট—রেয়ার আর্থ ধাতুর প্রধান উৎস। এত দিন বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, মোনাজাইট তৈরি হতে গভীর মাটির নিচে উচ্চ তাপ ও চাপ লাগে। কিন্তু এবার প্রথমবার দেখা গেল, সাধারণ পরিবেশে একটি গাছের শরীরেই এটি তৈরি হতে পারে। যদিও স্ফটিকগুলো খুবই ক্ষুদ্র, তাদের শিল্পগত গুরুত্ব অত্যন্ত বড় বলে মনে করছেন গবেষকরা।
এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে পরিবেশের ক্ষতি না করে রেয়ার আর্থ ধাতু সংগ্রহের নতুন ও টেকসই পথ খুলে দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল