সমুদ্রের নিচে বসবাসকারী কাঁটাযুক্ত প্রাণী সাগরশঙ্খ। প্রাণীটি দেখতে যতটা সাধারণ মনে হয়, বাস্তবে তারা ততটাই জটিল। সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রাণীর শরীরজুড়েই মস্তিষ্কের মতো এক উন্নত স্নায়ুতন্ত্র ছড়িয়ে রয়েছে। অর্থাৎ তাদের দেহের প্রতিটি অংশই মস্তিষ্কের মতো কাজ করে।
বার্লিনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের জীববিজ্ঞানী জ্যাক উলরিখ-লুটার বলেন, সাগরশঙ্খের মতো প্রাণীর প্রচলিত কোনো কেন্দ্রীয় মস্তিষ্ক না থাকলেও তারা মস্তিষ্কসদৃশ সংগঠন গড়ে তুলতে পারে। এটি জটিল স্নায়ুতন্ত্রের বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের ধারণা একেবারে পাল্টে দিতে পারে। সাগরশঙ্খ একাইনোডার্মাটা শ্রেণির প্রাণী। এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত তারামাছ, সমুদ্রশসা ও ব্রিটল স্টারও।
তাদের দেহের গঠন বয়স অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। শৈশবে তারা অন্যান্য প্রাণীর মতো দ্বিপার্শ্বিক (দুই পাশ সমান) হলেও বড় হয়ে বৃত্তাকার দেহরূপ নেয়।
গবেষক দলটি কচি বেগুনি রঙের সাগরশঙ্খ নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণায় দেখা যায়, পূর্ণবয়স্ক সাগরশঙ্খের পুরো শরীরটাই যেন ‘মাথা’, আর প্রচলিত অর্থে কোনো গলা নেই।
গবেষণায় আরও জানা যায়, সাগরশঙ্খের শরীরে শত শত পৃথক স্নায়ুকোষে এমন জিন সক্রিয়, যা মানুষসহ অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে দেখা যায়। অর্থাৎ, শুধু স্নায়ু নেটওয়ার্ক নয়, তাদের দেহজুড়ে একধরনের মস্তিষ্কসদৃশ ব্যবস্থা কাজ করছে।
তাছাড়া এই প্রাণীর শরীরে আলো-সংবেদনশীল কোষ পাওয়া গেছে, যা মানুষের চোখের রেটিনার মতো আলো শনাক্ত করতে পারে। তাদের স্নায়ুতন্ত্রের বড় একটি অংশই আলোতে সংবেদনশীল। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, আলো তাদের চলাচল ও আচরণে ভূমিকা রাখে। এমনকি কিছু কোষে একসঙ্গে দুই ধরনের আলোকগ্রাহক ও পাওয়া গেছে, যা তাদের আলো শনাক্ত করার ক্ষমতাকে আরও জটিল ও উন্নত করে তুলেছে।
গবেষকদের মতে, এই আবিষ্কার সাগরশঙ্খ ও অনুরূপ প্রাণীর বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা ও বিবর্তন প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল