বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম সম্প্রতি এক ইউটিউব সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলে খেলার সময় যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এবার সেই আলোচনার পর নতুন করে মুখ খুলেছেন সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার রেশমা আক্তার আদুরি।
একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রেশমা বলেন, “জাহানারা মুখ খোলার পর মনে হলো, আমারও বলা উচিত। জাতীয় দলে জায়গা পাওয়া একজন মেয়ের আজীবনের স্বপ্ন। অথচ সেই পর্যায়ে গিয়েও অনেককে কুপ্রস্তাবের মুখোমুখি হতে হয়। প্রতিবাদ করলে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। এই ভয়েই অনেকে চুপ থাকে।”
রেশমা আক্তার জানান, বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটে হয়রানি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি বছরের পর বছর ধরে চলা একটি প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা। “বিশ্বাস করবেন কি না জানি না—জাতীয় দলের ৯৯ ভাগ নারী ক্রিকেটারই জীবনের কোনো না কোনো সময় কুপ্রস্তাব পেয়েছেন,” বলেন তিনি।
তিনি আরও যোগ করেন, “রেদোয়ান স্যারের সময় থেকে এখন পর্যন্ত নারী বিভাগে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৮০ ভাগ পুরুষই মেয়েদের উত্ত্যক্ত করেছেন। নানা সময় কুপ্রস্তাব, ভয় দেখানো থেকে শুরু করে মানসিক নির্যাতন। সবই ঘটেছে।”
কোচিং ক্যাম্পে মুখ খোলায় সাসপেন্ড
রেশমা কক্সবাজারে এক ক্যাম্পের ঘটনার কথা উল্লেখ করেন এই সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেন, “খাবারের মান নিয়ে সামান্য প্রতিবাদ করেছিল লতা মণ্ডল। তাতেই ওকে ২০ দিনের জন্য সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়। তখনকার নারী দলের ম্যানেজার ছিলেন সালমান শাহর শ্বশুর শফিকুল হক হীরা। এই ঘটনার পর অন্য মেয়েরা বুঝে যায়—এখানে থাকতে হলে মুখ বন্ধ রাখতে হবে।”
রেশমার ভাষায়, “অনেকে এখন প্রমাণ চায়। কিন্তু কেউ কাউকে কুপ্রস্তাব দিলে কি সেটা রেকর্ড করে রাখে? আমি অনেক মেয়ের কান্না দেখেছি, অভিযোগ শুনেছি। প্রতিকার চেয়েও পাইনি। সেই অসহায়তাই আজ জাহানারাকে মুখ খুলতে বাধ্য করেছে।”
রেশমা বলেন, “বিকেএসপি ঘরানার কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম স্যার। উনার আচরণ নিয়ে বহু নারী ক্রিকেটারের অভিযোগ আছে। উনি বিকেএসপির বাইরের মেয়েদের গুরুত্বই দেন না। উনার পক্ষপাতিত্ব ও চারিত্রিক আচরণ নিয়ে আমি বহুবার শুনেছি।”
তিনি আরও বলেন,“আব্দুল আউয়াল ভুলু স্যার কতভাবে জাহানারাকে হয়রানি করেছে, বোর্ডের অনেকে জানে। নির্বাচক সজল চৌধুরীর কুপ্রস্তাবে অনূর্ধ্ব–১৯ পর্যায়ের মেয়েরা ভোগান্তিতে পড়েছে। খেলাঘরের রুহুল আমিনও অনেক মেয়েকে উত্ত্যক্ত করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। সাজ্জাদ আহমেদ (শিপন স্যার) মেয়েদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, তবে চরিত্র নিয়ে খারাপ কিছু শুনিনি।”
নারী বিভাগের পরিবেশ নিয়েও ক্ষোভ
“এমন পর্যায়ে গেছে যে এখন নারী বিভাগের অফিস সহকারীরাও জাতীয় দলের মেয়েদের অপমান করে কথা বলে,” বলেন রেশমা। তিনি বলেন, “বিসিবির নারী বিভাগে নারীদেরই সম্মান নেই। সৎ ও যোগ্য মানুষ না এনে, অসৎ ও ব্যর্থ লোকদেরই বসানো হয়েছে।”
“জাহানারা একা নয়, আমিও আছি”
জাহানারার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে রেশমা বলেন, “জাহানারা, তুমি একা নও—আমিও তোমার সঙ্গে আছি। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি চাই তদন্ত হোক, বিচার হোক। মেয়েদের জন্য নিরাপদে খেলার পরিবেশ তৈরি করা হোক।”
অধিনায়ক নিগার সুলতানার বিরুদ্ধেও অভিযোগ
অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির বিরুদ্ধেও অভিযোগের বিষয়ে রেশমা বলেন, “আমার জানা মতে জাহানারার অভিযোগ শতভাগ সত্যি। সিনিয়র আপুরা মুখবুজে সহ্য করে গেছে, তাই জুনিয়ররা মুখ খুলতে ভয় পায়। এটা বদলাতে হলে নারী ক্রিকেটের ভিতর থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে।”
সূত্র: কালের কণ্ঠ
বিডি প্রতিদিন/আশিক