প্রতি বছরের মতো এবারও অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত ক্রিসমাস দ্বীপে শুরু হয়েছে লাখ লাখ কাঁকড়ার বার্ষিক অভিবাসন বা জায়গা স্থানান্তর কার্যক্রম। বনের বাসস্থান ছেড়ে প্রজননের উদ্দেশ্যে সাগরের দিকে যাত্রা করেছে প্রায় ১০ কোটি লাল কাঁকড়া। ফলে দ্বীপটির রাস্তাঘাট ও জনবসতি এখন কাঁকড়ার দখলে।
অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন এবিসি এবং ক্রিসমাস দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিপাতের পরই এই অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে। লাল কাঁকড়াদের এই দল তাদের ডিম পাড়ার জন্য সমুদ্রের দিকে একযোগে রওনা হয়।
এই সময়কালে কাঁকড়ারা ব্যস্ত রাস্তা থেকে শুরু করে মানুষের ঘরবাড়ি, কোনো স্থানকেই তাদের পদযাত্রা থেকে বাদ দেয় না। কাঁকড়ার ভিড়ে রাস্তা এমনভাবে ঢেকে যায় যে গাড়ির চাকা চালানোও অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা কাঁকড়াদের এই আগমনকে এক বিরল উপহার হিসেবে দেখেন। তারা মোটেও বিরক্ত হন না।
ক্রিসমাস দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক অ্যালেক্সিয়া জাঙ্কোভস্কি এবিসিকে জানিয়েছেন, এখানকার সবাই কাঁকড়াদের সত্যিই মূল্য দেন। এই মাইগ্রেশন এক সত্যিকারের আনন্দের বিষয় হিসেবে দেখা হয়।
দ্বীপবাসীরা এই সময় কাঁকড়াদের সমুদ্রের দিকে যাত্রা মসৃণ করতে তাদের গাড়িতে কাঁকড়া সরানোর জন্য রেকিং যন্ত্র ও লিফ ব্লোয়ার রাখেন। জাঙ্কোভস্কি আরও বলেন, অনেকে কাঁকড়াদের স্বাধীনতা দিতে সকালে ও সন্ধ্যার প্রথমভাগে গাড়ি চালানো থেকেও বিরত থাকেন।
জাতীয় উদ্যানের তথ্য অনুসারে, কাঁকড়াদের এই মাইগ্রেশন সম্পূর্ণভাবে চাঁদ এবং জোয়ারের গতিবিধির ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর, চাঁদ যখন শেষ চতুর্থাংশে থাকে, তখন কাঁকড়ারা ভাটার টানে সূর্যোদয়ের ঠিক আগে ডিম পাড়ে। যেটি তারা রহস্যজনকভাবে আগে থেকেই বুঝতে পারে।
জাতীয় উদ্যানের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি সমন্বয়কারী ব্রেন্ডন টিয়েরনানের মতে, ২০০০ সালের গোড়ার দিকে যেখানে এই দ্বীপে প্রায় ৫ কোটি ৫০ লক্ষ কাঁকড়া ছিল, সেখানে বর্তমানে এই সংখ্যা প্রায় ১০ কোটিতে পৌঁছেছে। মাইক্রো-বোলতা প্রবর্তন করে ইয়েলো ক্রেজি পিঁপড়ার হুমকি কমানো সম্ভব হওয়ায় কাঁকড়ার সংখ্যা আকাশ ছুঁয়েছে।
ডিমগুলি পানিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই লার্ভা বের হয় এবং এক মাস সমুদ্রে ভেসে থাকে। বেশিরভাগই মাছ বা অন্যান্য শিকারীর পেটে গেলেও এক মাস পর প্রায় পাঁচ মিলিমিটারের শিশুকাঁকড়া হিসেবে তারা আবার ডাঙায় ফেরে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল