মানুষের মুখে নতুন দাঁত গজানোর আশায় বিজ্ঞানীরা এখন কাজ করছেন। দাঁত প্রতিস্থাপন বা ইমপ্লান্টের জটিল অস্ত্রোপচারের বিকল্প হিসেবে তারা ল্যাবরেটরিতে জীবন্ত দাঁত তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
সিএনএনের খবর অনুসারে, লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষক অ্যানা অ্যাঞ্জেলোভা ভলপনি প্রায় দুই দশক ধরে ল্যাবে দাঁত তৈরির গবেষণায় নিয়োজিত। তিনি ২০১৩ সালে এমন একটি দলে ছিলেন, যারা প্রথমবার মানুষের ও ইঁদুরের কোষ মিলিয়ে ল্যাবে একটি দাঁত তৈরি করতে সক্ষম হন।
সম্প্রতি তার নেতৃত্বে পরিচালিত নতুন গবেষণায় তারা আরও বাস্তবসম্মতভাবে দাঁত বেড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এবার তারা হাইড্রোজেল ব্যবহার করেছেন, যা মুখের ভেতরের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে অনেকটা মিলে যায়।
গবেষক জুয়েচেন ঝ্যাং জানান, তারা ইঁদুরের ভ্রূণ থেকে দাঁত তৈরির কোষ সংগ্রহ করে হাইড্রোজেলে প্রতিস্থাপন করেন। প্রায় আট দিনের মধ্যে সেখানে দাঁতের মতো গঠন তৈরি হয়। ২০১৩ সালের পরীক্ষায় এসব ‘টুথ প্রাইমোর্ডিয়া’ ইঁদুরের শরীরে প্রতিস্থাপন করলে তা দাঁতের মূল ও এনামেলসহ পূর্ণ দাঁতে রূপ নেয়।
তবে মানুষের শরীরে এ পদ্ধতি প্রয়োগের আগে এখনো অনেক ধাপ পেরোতে হবে। মূল চ্যালেঞ্জ হলো—ইঁদুরের কোষের পরিবর্তে সম্পূর্ণ মানব কোষ ব্যবহার করা। ভলপনি বলেন, যদি তা সম্ভব হয়, ভবিষ্যতে দুটি উপায়ে মানুষের দাঁত পুনর্গঠন করা যেতে পারে। ১. ল্যাবে তৈরি দাঁতের অঙ্কুর সরাসরি মুখের ফাঁকা সকেটে বসিয়ে সেখানে সেটিকে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতে দেওয়া অথবা ২. ল্যাবে সম্পূর্ণ দাঁত তৈরি করে পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মুখে প্রতিস্থাপন করা।
বিজ্ঞানীদের মতে, রোগীর নিজের কোষ থেকে তৈরি দাঁত দেহ সহজেই গ্রহণ করবে। প্রদাহ বা অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকবে না। তাছাড়া এমন দাঁত প্রকৃত দাঁতের মতোই অনুভূত হবে, যা সাধারণ ইমপ্লান্টে সম্ভব নয়। ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের গবেষক ভিক্টর নেভেস বলেন, ভলপনি এই ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক। তার গবেষণা দাঁত পুনর্জন্ম প্রযুক্তিকে শিল্প পর্যায়ে নেওয়ার দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিশ্বের আরও কিছু গবেষক একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। জাপানের ওসাকার কাতসু তাকাহাশি দাঁত না থাকা মানুষের জন্য অ্যান্টিবডি-ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করছেন, যা বর্তমানে মানব পরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টাফটস ইউনিভার্সিটির গবেষক পামেলা ইয়েলিক মানব ও শূকরের কোষ মিলিয়ে দাঁতের মতো গঠন তৈরি করেছেন।
এছাড়া ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মানুষের দাঁত থেকে সংগৃহীত স্টেম সেল (কোষ যা থেকে নতুন টিস্যু জন্ম নেয়) দিয়ে দাঁতের অভ্যন্তরীণ অংশ পুনর্গঠনের গবেষণা করছেন। গবেষকদের ধারণা, এই গতিতে কাজ চলতে থাকলে আগামী এক দশকের মধ্যেই মানুষের দাঁত পুনরায় জন্মানোর পদ্ধতি বাস্তবে রূপ নিতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল