মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শনিবার (২৫ নভেম্বর) মধ্যরাতে। রাত পেরোলেই বঙ্গোপসাগর ও দেশের বিভিন্ন নদ–নদীতে জাল ফেলবেন জেলেরা। ইতিমধ্যে বাগেরহাটের শরণখোলাসহ উপকূলের হাজারো জেলে মাছ ধরার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে অপেক্ষায় রয়েছেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের।
তবে নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের মনে নতুন করে দেখা দিয়েছে শঙ্কা ও আশঙ্কা। বিশেষ করে বন ও জলদস্যু আতঙ্ক ঘিরে রয়েছে উপকূলজুড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন এলাকায় অন্তত ২০টি দস্যু বাহিনী সক্রিয়। জেলেরা আশঙ্কা করছেন, গভীর সাগরে ট্রলার নিয়ে নামলেই দস্যুরা হামলে পড়তে পারে।
এদিকে, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সরকারি খাদ্য সহায়তার চাল না পাওয়ায় শরণখোলার বহু জেলে দারুণ কষ্টে দিন কাটিয়েছেন। সংসার চালাতে অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে—যেখানে প্রকৃত সাগরগামী জেলেরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত, সেখানে খাল–বিলের সৌখিন জেলেরা বরাদ্দের চাল পাচ্ছেন।
শুক্রবার দুপুরে শরণখোলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ঘাটে সারি সারি ফিশিং ট্রলার, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কেউ জাল তুলছেন, কেউ বরফ ভরছেন, কেউ খাদ্য ও জ্বালানি তেল নিচ্ছেন ট্রলারে।
নলবুনিয়ার জেলে মো. জাকির হোসেন বলেন, আমরা ঝড়–বন্যা আর ডাকাতের ভয় মাথায় নিয়েই সাগরে যাই। কিন্তু সরকারি সুবিধা খুব একটা পাই না। নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও অনেক জেলে এখনো চাল পাননি।
আরেক জেলে রুবেল তালুকদার বলেন, আমরা প্রকৃত জেলে, সাগরে যাই। কিন্তু আমাদের কার্ড হয়নি। চালও পাই না। খাল–বিলের মাছধরারা চাল পাচ্ছে, আমরা না।
স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী দেলোয়ার ফরাজী বলেন, এ মৌসুমে ইলিশ ধরা পড়েনি তেমন। দস্যুরা একবার ধরলে কয়েক লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এখন ভয় নিয়েই সাগরে যেতে হবে।
শরণখোলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, দস্যুদের কারণে আবার সাগরের ব্যবসা হুমকির মুখে পড়ছে। দস্যুদমনে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন সরকার জানান, শরণখোলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬ হাজার ৮১৪ জন, এর মধ্যে সরকারি সুবিধাভোগী ৪ হাজার ৪৫৯ জন। তিনি বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় প্রত্যেককে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তবে কিছু এলাকায় বিতরণে বিলম্ব হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, নিবন্ধনবিহীন জেলেরা ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে আবেদন করতে পারবেন। এদিকে জল ও বনদস্যুদের উত্থানে জেলেদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী নিরাপত্তা জোরদারে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সূত্র জানিয়েছে, জেলেদের নিরাপত্তায় দুবলা, কচিখালী ও কোকিলমুনি ক্যাম্পে সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন এবং দস্যু দমনে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল