দেশে নতুন বিদেশি বিনিয়োগে ধারাবাহিক পতন দেখা যাচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে নতুন বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৬২ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ছাড়া এ ধারা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। তবে মুনাফা পুনঃবিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে একই সময়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বিদেশিরা নতুন বিনিয়োগ করেছে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। যা ২০২৪ সালের একই সময়ে ছিল ২১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশে বিদেশি কোম্পানিগুলোর নতুন বিনিয়োগ কমেছে ১৩ কোটি ডলার বা ৬২ শতাংশ। আগের প্রান্তিকের তুলনায় কমেছে নতুন বিনিয়োগের পরিমাণও।
জুলাই-এপ্রিল প্রান্তিকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগ হলেও জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বিনিয়োগ এসেছিল ২৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। বিনিয়োগ কমেছে ৬৯ শতাংশ। একই সময়ে আন্তকোম্পানি ঋণের পরিমাণও। এপ্রিল-জুলাই প্রান্তিকে ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ছিল ৯ কোটি ২০ লাখ ডলার। বিনিয়োগ এবং আন্তকোম্পানি ঋণ কমলেও পুনঃবিনিয়োগ বেড়েছে। চলতি বছরের জুলাই-এপ্রিলে কোম্পানিগুলো ২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার পুনঃবিনিয়োগ করেছে। আগের বছরের একই সময়ে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে পুনঃবিনিয়োগ বেড়েছে চার গুণেরও বেশি। পুনঃবিনিয়োগ বাড়ায় বেড়েছে সার্বিক সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই।
তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে নিট এফডিআই এসেছে ৩০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এফডিআই ছিল ২৭ কোটি ডলার। বেড়েছে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ১৪৭ কোটি ডলার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আমরা সব সময় বলি যে দেশে সুদের হার বেশি সেই দেশে বিনিয়োগ হয়। বাংলাদেশের সুদহার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ আরও কয়েকটি দেশের চেয়ে বেশি হলেও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারছে না। সুতরাং সুদহার নয়, মূল কারণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করা কাজ করছে। কারণ যে দেশে মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি সেই দেশের বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশিত মুনাফা পায় না বলেই বিনিয়োগ করতে আর আগ্রহী হয় না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে হবে। ফলে শুধু বিদেশি বিনিয়োগ নয়, দেশি বিনিয়োগেরও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। সুতরাং দেশি বিনিয়োগ না হলে তো বিদেশি বিনিয়োগও হয় না। তাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগ পরিবেশ দুটোই উন্নত করতে হবে। তা না হলে বিনিয়োগ বাড়বে না। বর্তমান বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সরকারি ও বেসরকারি খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ এখনো প্রত্যাশার তুলনায় কম। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো, এই সমস্যা দ্রুত সমাধান খুবই কঠিন।
বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে জাতীয় মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে ২০৪৬ সালের মধ্যে ২০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যা সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে কৌশলগতভাবে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রস্তুত হওয়া এই মাস্টারপ্ল্যানটি ভূমি অধিগ্রহণ, অবকাঠামো প্রস্তুতি এবং বিনিয়োগকারীর আস্থার মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ