রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শুরু হয়েছে নির্মাণ, আবাসন, পানি, বিদ্যুৎ ও সংশ্লিষ্ট শিল্প নিয়ে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী মেলা। কনফারেন্স অ্যান্ড এক্সিবিশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেসের (সেমস-গ্লোবাল ইউএসএ) আয়োজনে গতকাল শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী চলবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত। তিন দশকের ধারাবাহিকতায় আয়োজিত এ মেলায় রয়েছে ৩০তম বিল্ড সিরিজ অব এক্সিবিশন্স, ২৭তম পাওয়ার সিরিজ অব এক্সিবিশন্স এবং সপ্তম ওয়াটার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার ড. মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন হায়দার, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এম এ কামাল বিল্লাহ, ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ‘জিআইজেড বাংলাদেশ’-এর প্রকল্পপ্রধান মো. তানভীর মাসুদ। সভাপতিত্ব করেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান সেমস-গ্লোবাল, ইউএসএ অ্যান্ড এশিয়া প্যাসিফিকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেরুন এন ইসলাম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়াসউদ্দিন হায়দার বলেন, ‘উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশের সংঘাত মোকাবিলায় গ্রিন টেকনোলজি ও টেকসই নির্মাণ জরুরি। এ প্রদর্শনী নবায়নযোগ্য শক্তি, শক্তি সাশ্রয় ও প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে এখনই উন্নয়নের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে।’
কামাল বিল্লাহ বলেন, ‘মানব জাতির টিকে থাকার দিকটি এখন সংকটাপন্ন। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামছে, জ্বালানি ফুরিয়ে আসছে। পৃথিবীতে জল আছে, কিন্তু পানযোগ্য জল সীমিত। টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি এখন সময়ের দাবি। এ প্রদর্শনী সেই সচেতনতা ও সমাধান খোঁজার গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হয়ে উঠেছে।’
মেহেরুন এন ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন নির্মাণ, জ্বালানি, পানি এ তিন খাতের উন্নয়ন এক মঞ্চে এসেছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এ মেলায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও যৌথ উদ্যোগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারাও এখানে এসে বাস্তব তথ্য জেনে নীতিনির্ধারণে সহায়তা নিচ্ছেন, যা একে উন্নয়নমুখী কার্যকর প্ল্যাটফর্মে রূপ দিয়েছে।’
মেলায় চীন, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্যসহ ২০টির বেশি দেশের ২ শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। রয়েছে ৫০০-এর বেশি স্টল ও আন্তর্জাতিক প্যাভিলিয়ন। তিন দিনে ৩৫ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী ও সাধারণ দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে বলে আশা আয়োজকদের। এখানে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন, এসিআই, রহিমআফরোজ, ওমেরা ও এসএসজি তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি ও পণ্য প্রদর্শন করছে।
নির্মাণসামগ্রী, যন্ত্রপাতি, অভ্যন্তর নকশা ও আবাসন প্রযুক্তি ছাড়াও এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সৌর প্রযুক্তি ও আধুনিক আলোকব্যবস্থার সমাধান। আয়োজকদের মতে দ্রুত নগরায়ণ ও জ্বালানি চাহিদার প্রেক্ষাপটে এ মেলা সংশ্লিষ্ট খাতে নতুন উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করবে।
এ ছাড়া মেলা উপলক্ষে পাঁচটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে দেশিবিদেশি বিশেষজ্ঞরা নির্মাণ, জ্বালানি ও পানি খাতে বৈশ্বিক প্রবণতা ও উদ্ভাবন নিয়ে মতবিনিময় করবেন। প্রদর্শনীর শেষ দিনে জিআইজেড বাংলাদেশের সহায়তায় আইসিসিবির পুষ্পাঞ্জলি হলে দিনব্যাপী ‘নবায়নযোগ্য শক্তির স্থিতিশীল রূপান্তর’ শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে সবুজ জ্বালানি, সৌরবিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে টেকসই বিনিয়োগ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।