‘রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ১ নম্বর গেটে এসি আরিফুজ্জামান স্যার ওয়্যারলেস সেটে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শটগান ফায়ারের নির্দেশ দেন। এরপর যাদের শটগান ছিল তারা ফায়ার করতে করতে ১ নম্বর গেটের দিকে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে চলে গেলেও একজন ছাত্র দুই হাত প্রসারিত করে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। পরবর্তীতে সে পুলিশের শটগানের গুলিতে আহত হয়।’ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় প্রসিকিউশনের ১৬তম সাক্ষী হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে একথা বলেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে কর্মরত নায়েক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক।
৩৯ বছর বয়সি পুলিশ সদস্য নায়েক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘গত বছর ১৬ জুলাই সকাল ৮টা ৪০ মিনিট থেকে আমার নামে ইস্যুকৃত গ্যাসগান নিয়ে এসআই (সশস্ত্র) মো. আশরাফুল ইসলাম স্যারের সঙ্গে পার্কের মোড়ে অবস্থান করি। ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে তাজহাট থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রবিউল ইসলাম ফোর্সসহ পার্কের মোড় আসেন। পৌনে ১১টার দিকে এসি মো. আরিফুজ্জামান স্যার পার্কের মোড়ে আসেন। এডিসি ডিবি শাহ নুর আলম পাটোয়ারী এবং বেরোবি ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই (নিরস্ত্র) বিস্তৃতী ভূষণ রায় পার্কের মোড়ে আসেন এবং আমাদের সবাইকে একত্রিত করে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে ব্রিফিং প্রদান করেন।’
তিনি বলেন, ‘১১টা ৫০ মিনিটে আমাদের সব অফিসার ও ফোর্সদের বেরোবি ১ নম্বর গেটে মোতায়েন করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর আনুমানিক ১৫০০ থেকে ২০০০ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা লালবাগের দিক থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ১ নম্বর গেটে আসে এবং পুলিশের বিপরীত দিকে অবস্থান করে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্ররা ১ নম্বর গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে আমাদের এসি আরিফুজ্জামান স্যারের সঙ্গে কথা বলে, একপর্যায়ে বাগবিত া হয়। পরবর্তীতে এসি আরিফুজ্জামান স্যারের নির্দেশে ছাত্রদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়। এতে তারা ছত্রভঙ্গ না হলে পরবর্তীতে এসি আরিফুজ্জামান গ্যাসগান ফায়ারের নির্দেশ দেন এবং গ্যাসগান ফায়ার করা হলে ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে চলে যায়। গ্যাসের কিছু ঝাঁজ আমাদের চোখে লাগলে আমরা বেরোবি ১ নম্বর গেটের ভিতরে প্রবেশ করি। পরবর্তীতে আমরা একটু স্বাভাবিক হলে এসি আরিফুজ্জামান স্যারসহ আমি পার্কের মোড়ের দিকে যাই এবং এসি আরিফুজ্জামান স্যার আমার কাছ থেকে গ্যাসগান নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্র-জনতার ওপর গ্যাস সেল নিক্ষেপ করেন।’
এদিকে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলামের সাক্ষ্য গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ দ্বিতীয় দিনের মতো জবানবন্দি দেন তিনি। তার অসামাপ্ত জবানবন্দি গ্রহণের আগামী ১৮ নভেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে গত বুধবার এ মামলায় প্রসিকিউশনের ২৬ নম্বর ও শেষ সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি প্রদান শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা। সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ এ মামলার মোট আসামি আটজন।