হিন্দি সিনেমার ঝলমলে জগতের আড়ালে লুকিয়ে থাকে অজানা প্রতিযোগিতা, স্বপ্নভঙ্গ আর নেপথ্যের নানা রহস্য। সেই অনাবিষ্কৃত দিকটি প্রথমবারের মতো ক্যামেরায় তুলে ধরেছেন শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খান। তার পরিচালনায় তৈরি ওয়েব সিরিজ ‘দ্য ব্যাডস অব বলিউড’ মুক্তির পর থেকেই নেটফ্লিক্সে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ব্যঙ্গ, রসবোধ আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গির মিশেলে নির্মিত এই সাত পর্বের সিরিজ বলিউডের গ্ল্যামারকে যেমন উন্মোচন করেছে, তেমনি নিজেকেও রসিকতার ছলে কটাক্ষ করেছে।
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র দিল্লির যুবক আসমান সিংহ (অভিনয়ে লক্ষ্ম্য), যার স্বপ্ন বলিউড জয় করা। তার চোখ দিয়েই দর্শক দেখতে পান নেপোটিজম, প্রযোজকদের স্বার্থসন্ধি, আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রভাব, গণমাধ্যমের কৌশল, মাদক এবং ক্ষণস্থায়ী খ্যাতির অন্ধকার দিক। একের পর এক চমক আর বাঁক বদলে গল্প এগিয়েছে নিরবচ্ছিন্ন গতিতে।
সমালোচকেরা বলছেন, নির্মাণে সাহসী ভঙ্গি এবং রসবোধই সিরিজটির সবচেয়ে বড় শক্তি। পর্দায় হাজির হয়েছেন বলিউডের তারকারাও—আমির খান, শাহরুখ খান, সালমান খান, রণবীর কাপুর, রণবীর সিং, রাজকুমার রাও, অর্জুন কাপুর, রাজামৌলি। করণ জোহর এখানে অতিথি নন, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
অভিনয়শিল্পীদের পারফরম্যান্সও প্রশংসা কুড়িয়েছে। ইমরান হাশমি, মনোজ পাহওয়া, মোনা সিং, মানীশ চৌধুরী থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীরা সবাই নজর কাড়েন। গফুর ভাইয়ের চরিত্রে আরশাদ ওয়ার্সি আলাদা করে মনে রাখার মতো। তবে সবচেয়ে বড় বিস্ময় এনেছেন ববি দেওল। অজয় তালওয়ার চরিত্রে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন এমন এক সুপারস্টারের রূপ, যিনি নিজের মেয়েকে (সাহের বাম্বা) কোনো বহিরাগত নায়কের বিপরীতে অভিনয় করতে দিতে চান না। এই ভূমিকায় ববি দেওলের ক্যারিয়ারে নতুন মোড় এসেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
রাঘব জুয়াল, অন্যা সিং এবং সাহের বাম্বার পর্দার রসায়ন গল্পে বাড়তি আকর্ষণ যোগ করেছে। প্রযুক্তিগত দিক থেকেও সিরিজটি সমৃদ্ধ—চমকপ্রদ চিত্রগ্রহণ, গতিময় সম্পাদনা আর পোশাকের রঙিন নকশা দর্শনীয় মাত্রা এনেছে। নিজের ফ্যাশন ব্র্যান্ডও কৌশলে কাহিনির ভেতর জুড়ে দিয়েছেন আরিয়ান। সঙ্গীতে অনিরুদ্ধ রবিচন্দর ও শাশ্বত সচদেব কখনো উচ্ছ্বাস, কখনো ব্যঙ্গাত্মক আবহ তৈরি করে প্রতিটি দৃশ্যকে প্রাণবন্ত করেছেন।
পরিচালনায় প্রথম কাজেই আরিয়ান খান প্রমাণ করেছেন তার স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি। বলিউডকে যেমন বিদ্রূপের চোখে দেখেছেন, তেমনি নিজের তারকা-পরিচয়কেও নিঃসংকোচে ব্যঙ্গ করেছেন। তাই বলিউডের অন্দরমহল নতুনভাবে দেখতে চাইলে এই সিরিজ একবার দেখা উচিত বলে মনে করছেন সমালোচকেরা।
মুক্তির পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা। সাহসী নির্মাণশৈলী, আত্ম-সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি আর ব্যঙ্গাত্মক রসবোধের কারণে ‘দ্য ব্যাডস অব বলিউড’ আরিয়ান খানকে আলাদা জায়গায় দাঁড় করিয়েছে—এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিডি প্রতিদিন/আশিক