মৌসুম আসতে না আসতেই চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। বাড়াচ্ছে আতঙ্ক। ঢাকাসহ সারা দেশের হাসপাতালে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ঢাকার বাইরে চার জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরগুনা, গাজীপুরে এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই ডেঙ্গু ঠেকাতে ঢাকাসহ সারা দেশে আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরগুনা, গাজীপুর এ জেলাগুলোতে এডিস মশার ঘনত্ব গত বছরের তুলনায় বেশি। এ জায়গাগুলোতে বর্তমানে রোগী ভর্তিও বেশি হচ্ছে। কোথাও যদি এডিস মশার ঘনত্ব বেশি হয় এবং আক্রান্ত রোগীও থাকে তাহলে সেখানে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়বে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত চার মাসে গাজীপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৫ জন, এখনো হাসপাতালে ভর্তি পাঁচজন। চট্টগ্রামে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৪ জন, বর্তমানে ভর্তি আছেন ছয়জন। এ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুজন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্ষা মৌসুম এলেই এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। গত বছরও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল। তাই এ বছর আমরা এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, মেমন হাসপাতালের দ্বিতীয় শাখাকে ‘ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল’ হিসেবে ঘোষণা করেছি, বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০ শয্যার একটি পৃথক ইউনিট। প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। আনা হয়েছে মশক নিধনে কার্যকর ওষুধ, যোগ হয়েছে নতুন ফগার মেশিন। আতঙ্কের কিছু নেই তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীকে সচেতন থাকতে হবে। কক্সবাজারে আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ জন, বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন তিনজন। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হচ্ছে। হালকা বৃষ্টি হলে পানি জমছে বিভিন্ন জায়গায়। জমে থাকা পানিতে মশার বংশবিস্তার করছে। এখন থেকে সচেতন না হলে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও বাড়বে। এ জন্য মশক নিধন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। বরগুনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৫ জন, বর্তমানে ভর্তি আছেন ২৭ জন। এ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন। বরগুনা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। আশপাশের জমে থাকা পানিতে বংশবিস্তার করছে এডিস মশা। নোংরা পরিবেশের কারণে নিয়ন্ত্রণে আসছে না মশা। ফলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, এখন আর শুধু শহরে নয়, সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রতিরোধ ও চিকিৎসা দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরোধের জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা জরুরি। বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবনে সাধারণত এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা খুব জরুরি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে গাইডলাইন অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে, প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রোগী এবং স্বজনরা অনেক সময় বুঝতে পারেন না, তারা কী করবেন। তাই প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য ঠিক মতো কাউন্সেলিং প্রয়োজন। ডেঙ্গু রোগীর কাউন্সেলিংয়ের জন্য একটি টিম প্রস্তুত থাকলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ডেঙ্গু পরীক্ষাকে অনেক সহজ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’