যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্য বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় সমান। এ রাজ্যের এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে পাড়ি দিতে হয় ৩/৪ শ কিলোমিটার। ওহাইওর কলম্বাস থেকে সিনসিনাতি যেতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের ৭১ নম্বর ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে যেতে হয়। এ হাইওয়ের পাশেই মেসন শহর। ১৮০৩ সালে মাত্র ১৭ শ ডলারের বিনিময়ে উইলিয়াম মেসন এক অকশনে ৬৪০ একর জমি কিনে নেন। এ মেসনের নামেই শহরের নামকরণ হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সৈনিক ছিলেন। মেসন শহর বর্তমানে বিখ্যাত লিন্ডার ফ্যামিলি টেনিস সেন্টারের জন্য। এখানেই অনুষ্ঠিত হয় পৃথিবীর পুরোনো টেনিস টুর্নামেন্টগুলোর একটি; সিনসিনাতি ওপেন।
চারদিকে সবুজের মহাসমারোহ, সুপ্রাচীন গাছ আর বিশাল খোলা জমিনে গড়ে উঠেছে টেনিসের এক রাজপ্রাসাদ। কান পাতলেই শোনা যায় পাখিদের গান। মাথার ওপরে সুনীল আকাশ। মেসন শহরে এমন শান্ত পরিবেশের মাঝেই দাঁড়িয়ে রয়েছে লিন্ডার ফ্যামিলি টেনিস সেন্টার। সাধারণ কোনো টেনিস সেন্টার নয় এটি। এখানেই প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় সিনসিনাতি ওপেন। ১৮৯৯ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই টেনিস টুর্নামেন্ট। ১৯৭৯ সাল থেকে মেসন শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এটিপি ও ডব্লিউটিএ ট্যুরের গুরুত্বপূর্ণ এ লড়াই। যে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন টেনিস ইতিহাসের প্রায় সব মহান তারকা।
যুক্তরাষ্ট্রের ৭১ নম্বর ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে ছুটে চললেই চোখে পড়ে লিন্ডার ফ্যামিলি টেনিস সেন্টার কমপ্লেক্স। সেন্টার কোর্টটিই সবচেয়ে বড়। এ কোর্টের গ্যালারিতে বসে ১১ হাজার ৬০০ টেনিসপ্রেমী খেলা দেখতে পারেন। প্রায় ৮৮ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এ কমপ্লেক্সটিতে রয়েছে চারটি স্টেডিয়াম কোর্ট এবং ১৬টি অতিরিক্ত প্র্যাকটিস কোর্ট। কারুকাজ করা সুবিশাল প্রবেশদ্বার পেরিয়ে সেন্টার কোর্টের দিকে এগোতেই চোখে পড়ল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা বস্তুর। পুরো টেনিস সেন্টারই উলট-পালট হয়ে আছে। সামনের মাসেই সিনসিনাতি ওপেন অনুষ্ঠিত হবে। সেই লক্ষ্যে স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ চলছে। কর্মকর্তাদের কেউ নেই এখানে। একজন সংস্কার কর্মীর কাছ থেকে জানা গেল, টেনিস কোর্ট সম্পর্কে নানা কথা। রজার ফেদেরারকে এখানে চ্যাম্পিয়ন হতে দেখেছেন তিনি। সেরেনা উইলিয়ামসের ট্রফি জয়ের আনন্দও উপভোগ করেছেন। সিনসিনাতি ওপেনের পুরুষ এককে সর্বোচ্চ সাতবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রজার ফেদেরার। সুইস এ তারকা লিন্ডার ফ্যামিলি টেনিস সেন্টার নিয়ে একবার বলেছিলেন, ‘আমার খেলা টুর্নামেন্টগুলোর মধ্যে সমর্থকদের জন্য সবচেয়ে ভালো টুর্নামেন্ট হলো সিনসিনাতি ওপেন।’ এখানে গ্যালারির খুব কাছেই কোর্টের অবস্থান। দর্শকরা খোলা চোখে খেলা উপভোগ করতে পারেন।
সেরেনা উইলিয়ামসও এই টুর্নামেন্টে একসময় নিয়মিত খেলেছেন। খেলেছেন পিট সাম্প্রাস, আন্দ্রে আগাসিরা। কিংবদন্তিদের পদভারে মুখরিত এই কোর্ট দেখে মুগ্ধ না হয়ে থাকার উপায় নেই।
প্রতি বছর সিনসিনাতি ওপেন স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার যুক্ত করে। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পরিবহন ও পর্যটন খাতে ব্যাপক কর্মকাণ্ড ঘটে এ সময়টিতে। শুধু আমেরিকান নয়, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে টেনিসপ্রেমীরা ভিড় করেন এখানে। শুধু অতীতের গৌরব নয়, ভবিষ্যতের দিকেও তাকিয়ে আছে এই কোর্ট। আধুনিকায়নের ছোঁয়ায় সিনসিনাতি ওপেন নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।