দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া শিশুদের প্লাস্টিক খেলনার ৭০ শতাংশেই অতিমাত্রায় বিষাক্ত ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়ামের মতো স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান রয়েছে এসব খেলনায়। এগুলোর মাত্রা আন্তর্জাতিক নিরাপদ সীমার চেয়ে ১০ থেকে ৭০ গুণ পর্যন্ত বেশি।
গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য প্রকাশ করে পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়নমূলক সংগঠন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)।
‘টকসিক প্লে-টাইম : আনকভারিং হেভি মেটালস ইন চিলড্রেনস প্লাস্টিক টয়েজ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে এসব তথ্য। ঢাকায় এসডোর কার্যালয়ে এ প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। গবেষণায় ফিলিপাইনভিত্তিক সংস্থা ব্যান টকসিকসের উন্নত এক্স-রে ফ্লুরোসেন্স প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এসডো জানায়, গবেষণাটি কেন্দ্রীভূত ছিল বিশেষভাবে শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সি শিশুদের জন্য তৈরি খেলনার ওপর। কারণ এ বয়সি শিশুদের দাঁত গজানোর সময় মুখে খেলনা দেওয়ার প্রবণতা বেশি এবং তাদের দেহে রাসায়নিকের প্রতি সংবেদনশীলতা সবচেয়ে বেশি হয়।
মোট ৭০টি কঠিন প্লাস্টিকের খেলনা নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। মূলত লাল, হলুদ, কমলা রঙের খেলনায় জোর দেওয়া হয়। কারণ আগের গবেষণাগুলোয় দেখা গেছে, এসব রঙে বিষাক্ত রঞ্জকের উপস্থিতি বেশি। নমুনাগুলো দেশের বৃহত্তম খেলনাবাজার ঢাকার চকবাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়। যার মধ্যে ছিল ১৮টি স্থানীয় ব্র্যান্ড (৩-৫টি নমুনা করে)। দুটি চীনা ব্র্যান্ড (৩টি করে নমুনা) ও ৫টি নামবিহীন খেলনা। গবেষণা তথ্য ও ফলাফল উপস্থাপন করে এসডোর রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাম্পেইন অ্যাসোসিয়েট নওশিন নায়লা বলেন, ‘সংগৃহীত নমুনার মধ্যে ৭০ শতাংশ খেলনায় অতিমাত্রায় ভারী ধাতু, বিশেষত ক্রোমিয়াম ও অ্যান্টিমনি পাওয়া গেছে। কিছু খেলনায় নিরাপদ মাত্রার তুলনায় ১০ থেকে ৭০ গুণ বেশি ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। যেমন ক্রোমিয়াম ৪৩০০ পিপিএম (সীমা ৬০ পিপিএম), সিসা ২৩৫০ পিপিএম (সীমা ৯০ পিপিএম), পারদ ১০৮০ পিপিএম (সীমা ৬০ পিপিএম) ও ক্যাডমিয়াম ৬৪০ পিপিএম (সীমা ৭৫ পিপিএম)।’
এ ছাড়া আমান টয় গার্ডেনের প্রস্তুত করা একটি নীল রঙের খেলনা গাড়িতে নিরাপদ সীমার ২৬ গুণ বা ২ হাজার ৩৫০ পিপিএম সিসা পাওয়া গেছে। পারদ নিরাপদ সীমার ১৮ গুণ (১, ০৮০ পিপিএম) ও ক্রোমিয়াম ২৩ গুণ বেশি (১, ৪০০ পিপিএম) পাওয়া গেছে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, উজ্জ্বল রঙের কিছু খেলনা রয়েছে যেগুলো শিশুদের বেশি আকর্ষণ করে, সেগুলোতে সর্বোচ্চ মাত্রায় ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। এসব উজ্জ্বল রঙের ২০ শতাংশ খেলনায় বিপজ্জনক মাত্রায় ক্লোরিন ও ব্রোমিন রয়েছে, যা পিভিসি প্লাস্টিক ও ফ্লেম রিটার্ডেন্ট উপকরণ ব্যবহারের প্রমাণ দেয়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, আমান টয় গার্ডেন, খোকন প্লাস্টিক প্রোডাক্টস ও শাহজালাল টয়স গ্যালারি এ তিনটি স্থানীয় প্রস্তুতকারকের ১০০ শতাংশ খেলনাই নিরাপদ সীমা অতিক্রম করেছে। এ খেলনাগুলো ব্যবহার ও মুখে দেওয়ার মাধ্যমে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার ক্ষয়, কথা বলা ও শেখার দেরি, কিডনি রোগ, আচরণগত সমস্যা ও মনোযোগের ঘাটতি এবং ক্যানসারের দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি বাড়ে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়। এ ছাড়া এ খেলনাগুলোর বর্জ্য খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে এবং এতে থাকা সিসা বাতাসে ছড়িয়ে মানবদেহে প্রবেশ করছে বলে জানানো হয়।