ঈদুল ফিতরের আগেই শ্রমিকদের মজুরি ও ভাতা পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছেন দেশের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। শিল্প পুলিশ এবং বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) মতে, বেশির ভাগ কারখানা ইতোমধ্যেই ফেব্রুয়ারি মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে এবং এখন মার্চ মাসের ১৫ দিনের মজুরি বিতরণ করছে।
তারা আরও বলেছেন, তৈরি পোশাক কারখানার একটি বড় অংশ ইতোমধ্যেই ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে এবং বাকিরা শিগগিরই পরিশোধ করবে। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগেই সব পাওনা পরিশোধ করা হবে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১০৭টি চালু কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৬৯টি কারখানা ফেব্রুয়ারি মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে। তাছাড়া, প্রায় ৩০টি কারখানা ইতোমধ্যেই মার্চ মাসের ১৫ দিন বা পুরো মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে এবং মোট পোশাক কারখানার অর্ধেকেরও বেশি ইতোমধ্যেই ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে।
শিল্প পুলিশ, উৎপাদনকারী এবং শ্রমিক নেতারা আশাবাদ করছেন, মজুরি, বোনাস এবং ঈদ পরিবহনের পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো হবে। এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইম) হাসিবুল আলম বলেন, ঈদের আগে বেশ কিছু কারখানা মজুরি এবং উৎসব ভাতা বিতরণ শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, সাধারণত, কারখানা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন তারিখে মজুরি এবং বোনাস বিতরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি কারখানা কর্তৃপক্ষ ২৫ মার্চ মজুরি এবং ২৯ মার্চ ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে শেষ কর্মদিবসে বোনাস প্রদান করতে পারে। ঈদের আগে বেতন বিতরণ নিয়ে তারা কোনো উত্তেজনা দেখতে পাচ্ছেন না এবং শ্রমিকদের সময়মতো বেতন দেওয়া হবে বলেও তিনি আশাবাদী। তবে গত শনিবার গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় পোশাক খাতে অস্থিরতা দেখা দেয়, যার ফলে প্রায় ৩০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিক মজুরি, ভাতা এবং ঈদের ছুটিসহ বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় নামেন। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের আশঙ্কায় প্রায় ৩০টি কারখানার কর্তৃপক্ষ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের-২ (গাজীপুর) পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, জায়ান্ট নিট ফ্যাশনের শ্রমিক এবং ব্যবস্থাপনার মধ্যে বিরোধের কারণে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ করে দেয়। একই কারণে অন্যান্য পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষও তাদের কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার পর, বেশির ভাগ কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিল। গাজীপুর অঞ্চলের কারখানাগুলোর বেতন-ভাতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ধীরে ধীরে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করছে। আমরা আশা করি ২৭ মার্চের মধ্যে বেশির ভাগ কারখানা তাদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করবে। আমরা এ বিষয়ে কোনো উত্তেজনা দেখতে পাচ্ছি না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আরও জানিয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এদিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে গত শনিবার সকালে চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে জেএমএস গার্মেন্টস লিমিটেডের শ্রমিকরা। পরে পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ব্যাংকগুলো সপ্তাহ শেষের কারণে গত বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি কারখানা বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। আমরা আশা করছি ২৫ মার্চের মধ্যে বেশির ভাগ কারখানার উৎসব ভাতা পরিশোধ করা হবে এবং ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগে মার্চ মাসের অর্ধেক মজুরি এবং অন্যান্য ভাতাও পরিশোধ করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার বলেন, এই খাতের পরিস্থিতি বাইরে থেকে যা মনে হচ্ছিল তার চেয়ে অনেক ভালো। বেশির ভাগ পোশাক কারখানা ইতোমধ্যেই তাদের বোনাস পরিশোধ করেছে এবং শিগগিরই মার্চ মাসের অর্ধেক মজুরি পরিশোধ করবে। তিনি আরও বলেন, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের কারণে পরিস্থিতি জটিল বলে মনে হচ্ছে। তবে আমরা আশা করছি ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। শুক্রবার এবং শনিবারের কারণে, বোনাস বিতরণে ধীরগতি দেখা দিয়েছে, যা চলতি সপ্তাহের মধ্যে সমাধান হবে। চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে ৩১ মার্চ অথবা ১ এপ্রিল ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে।