নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ীর নাম ঘোষিত হওয়ার কিছু সময় পর থেকেই তুমুল সমালোচনার মুখে রয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। নোবেল কমিটি তাকে ‘শান্তির অগ্রদূত’ আখ্যা দিয়েছে; অথচ এই মাচাদো ইসরায়েল ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘোরতর সমর্থক, যা প্রকারান্তরে তাকে গাজায় বোমাবর্ষণ ও গণহত্যার সাথী বানিয়েছে; এমনকি তিনি নিজ দেশের সরকার উৎখাতে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপও চেয়েছেন। এসবই তাকে শান্তি পুরস্কারের অযোগ্য এবং নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মত সমালোচকদের। এনডিটিভি লিখেছে, ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থিদের আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মাচাদো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাগরিক সাহসের শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। নোবেল পুরস্কার কমিটি শুক্রবার লাতিনের দেশটিতে গণতন্ত্রের প্রসারে কাজ ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। এর কয়েক ঘণ্টা পরই হোয়াইট হাউস এ ঘোষণার সমালোচনা করে বলে, নোবেল কমিটি শান্তির ওপরে রাজনীতিকে স্থান দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ৬-৭টি যুদ্ধ থামানোর কৃতিত্ব নেওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শান্তি পুরস্কার পাইয়ে দেওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর তাদের এ মন্তব্য আসে। মাচাদো পরে তার পুরস্কার ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টও পরে জানান, মাচাদো পুরস্কার পাওয়ায় তিনি খুশি। -এনডিটিভি
যেসব কারণে মাচাদোর সমালোচনা : সমালোচকরা ভেনেজুয়েলার এ রাজনীতিকের পুরোনো সব পোস্ট হাজির করছেন যেখানে মাচাদো ইসরায়েল ও নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির প্রতি তার অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের প্রতি সংহতি জানানো এ নারী অবশ্য কোনো পোস্টে ফিলিস্তিনে হত্যাকাণ্ডের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সরাসরি কিছু লেখেননি। অবশ্য তিনি বারবার যার প্রশংসা করেছেন, সেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। বছরের পর বছর ধরে তার পোস্টে বোঝা যাচ্ছে, তিনি নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র। তিনি একসময় বলেছিলেন, ভেনেজুয়েলার সংগ্রামই ইসরায়েলের সংগ্রাম। তারও দুই বছর পর তিনি ইসরায়েলকে ‘স্বাধীনতার সত্যিকারের মিত্র’ অভিহিত করেছিলেন। এমনকি ক্ষমতায় গেলে ভেনেজুয়েলার দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। নরওয়ের আইনপ্রণেতা বিয়র্নার মক্সনেস বলছেন, মাচাদো ২০২০ সালে ইসরায়েলের লিকুদ পার্টির সঙ্গে সহযোগিতামূলক দলিলে স্বাক্ষর করেছেন। লিকুদ পার্টি গাজায় গণহত্যার জন্য দায়ী, যে কারণে এবারের পুরস্কার নোবেলের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়নি, বলেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুসলিম নাগরিক অধিকারভিত্তিক সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস ভেনেজুয়েলার মাচাদোকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার অচিন্তনীয় সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে।