যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আগামী মাস থেকে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যে আরও ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সংবেদনশীল সফটওয়্যার রপ্তানিতেও বিধিনিষেধ দিতে যাচ্ছে।
এর আগে শুক্রবার আরেক পোস্টে তিনি দুর্লভ খনিজ রপ্তানি নীতি আরও কঠোর করায় বেইজিংয়ের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, চীন ‘খুবই বৈরি হয়ে উঠছে’ এবং তারা বিশ্বকে ‘জিম্মি করে রাখা’র চেষ্টা করছে। তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আসন্ন বৈঠক বাতিল করারও হুমকি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পরে অবশ্য বলেছেন, তিনি বৈঠক বাতিল করেননি তবে শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি হবে কি না তা তিনি জানেন না। ‘তা সত্ত্বেও আমি সেখানে যাব,’ দক্ষিণ কোরিয়া সফর বাতিল হবে না ইঙ্গিত দিয়ে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প এমনটাই বলেছেন। দুর্লভ খনিজসহ সংবেদনশীল বেশকিছু উপাদানের উৎপাদন ও সরবরাহে চীনের একক কর্তৃত্ব রয়েছে। এসব খনিজ গাড়ি, স্মার্টফোনসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য উপাদান। শেষবার বেইজিং যখন দুর্লভ খনিজে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, চলতি বছরের শুরুর দিকে ট্রাম্প চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর পর খনিজের ওপর নির্ভরশীল অনেক মার্কিন কোম্পানি তখন চরম বিপাকে পড়েছিল। গাড়ি নির্মাতা ফোর্ডকে কিছু সময়ের জন্য উৎপাদনও বন্ধ রাখতে হয়। দুর্লভ খনিজ রপ্তানিতে কড়াকড়ির পাশাপাশি মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কোয়ালকম বাজারে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারে চেষ্টা করছে কি না এ নিয়ে চীন তদন্তও শুরু করেছে। বেইজিংয়ের এ পদক্ষেপের কারণে আরেকটি চিপ নির্মাতা কোম্পানি অধিগ্রহণে কোয়ালকমের চেষ্টা থমকে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোয়ালকমের ব্যবসার বড় অংশ চীনেই। বেইজিং আরও জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির মালিকানাধীন বা পরিচালিত এমন জাহাজসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজের বন্দর ব্যবহারেও নতুন ফি ধার্য করছে। ‘খুবই অ™ু¢ত কিছু ঘটছে চীনে। তারা খুবই বৈরী হয়ে উঠছে,’ শুক্রবার সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টে এমনটাই লেখেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই শুল্ক নিয়ে বিশ্বকে অস্থির করে তোলেন। একপর্যায়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরের পণ্যে পাল্টাপাল্টি যে শুল্ক দেয় তা তিন অঙ্কের ঘর পেরিয়ে যায়। পরে মে মাসে ‘যুদ্ধবিরতি’তে সম্মত হলে দুই দেশ একে অপরের পণ্যে শুল্ক অনেকটাই নামিয়ে আনে। এখন চীনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে বছরের শুরুর তুলনায় বাড়তি ৩০ শতাংশ শুল্ক দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের চীনে ঢুকতে গুনতে হচ্ছে ১০ শতাংশ। -রয়টার্স
এরপর থেকে দুই দেশের কর্মকর্তারা টিকটক, কৃষিপণ্য, দুর্লভ খনিজ ও সেমি কন্ডাক্টরের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বাণিজ্য নিয়ে একের পর এক বৈঠকও করেছেন। চলতি মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় সম্মেলনেও দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা। আগের রাউন্ডের বাণিজ্য আলোচনাগুলোতে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে সেমি কন্ডাক্টরের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করতে চাপ দিয়েছিল। তারা যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে স্থিতিশীল শুল্কনীতিও চাইছিল, যা তাদের কোম্পানিগুলোর যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য বিক্রি সহজ করবে। শি এর আগেও দুর্লভ খনিজে তার দেশের আধিপত্যকে বাণিজ্য আলোচনায় কাজে লাগিয়েছিলেন। কিন্তু দিনকয়েক আগে প্রকাশিত তাদের রপ্তানি নীতিতে দেখা যাচ্ছে তারা বিদেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাতা কোম্পানিগুলোকে নিশানা বানিয়ে বিধিনেষধ আরও কঠোর করেছে।