রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
শনিবার বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে এবং ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাবেক এই শিক্ষক, সাহিত্যিকের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ।
উল্লেখ্য, রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী সানজিদা ইসলাম, একমাত্র পুত্র সাফাকাত ইসলামসহ অগণিত ছাত্র, ভক্ত, অনুরাগী রেখে গেছেন।
ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক নিয়ে গত শুক্রবার (৩ অক্টোবর) ল্যাব এইড হাসপাতালে ভর্তি হন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ওইদিন রাতেই তার হার্টে অস্ত্রোপচার করে দুইটি রিং পরানো হয়। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত রবিবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া।
১৯৫১ সালের ১৮ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তার বাবার নাম সৈয়দ আমীরুল ইসলাম এবং মাতা রাবেয়া খাতুন। তিনি সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৮ সালে সিলেট এম সি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ৭২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৮১ সালে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইয়েটস-এর কবিতায় ইমানুয়েল সুইডেনবার্গের দর্শনের প্রভাব বিষয়ে পিএইচডি করেন। পেশাগত জীবনে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতার নির্ধারিত সময় শেষে ২০১৮ সালে অবসর নেন তিনি। এরপর তিনি ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে (ইউল্যাব) যোগ দেন। ২০২৩ সালে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক করা হয়।
তার উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থগুলো হলো-স্বনির্বাচিত শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৯৪), থাকা না থাকার গল্প (১৯৯৫), কাঁচ ভাঙ্গা রাতের গল্প (১৯৯৮), অন্ধকার ও আলো দেখার গল্প (২০০১), প্রেম ও প্রার্থনার গল্প (২০০৫), সুখদুঃখের গল্প, বেলা অবেলার গল্প ইত্যাদি।
উপন্যাসগুলো হলো-আধখানা মানুষ্য (২০০৬), দিনরাত্রিগুলি, আজগুবি রাত, তিন পর্বের জীবন, যোগাযোগের গভীর সমস্যা নিয়ে কয়েকজন একা একা লোক, ব্রাত্য রাইসু সহযোগে, কানাগলির মানুষেরা ইত্যাদি।
প্রবন্ধ ও গবেষণাগ্রন্থগুলো হলো নন্দনতত্ত্ব (১৯৮৬), কতিপয় প্রবন্ধ (১৯৯২), অলস দিনের হাওয়া, মোহাম্মদ কিবরিয়া, সুবীর চৌধুরীর সহযোগে, রবীন্দ্রানাথের জ্যামিতি ও অন্যান্য শিল্পপ্রসঙ্গ ইত্যাদি।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম, শামসুর রাহমানেরর উপর তার উল্লেখযোগ্য গবেষণা কর্ম রয়েছে। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন, ২০১৮ সালে একুশে পদক অর্জন করেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত