জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, যেনতেনভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে উপদেষ্টাদের দায়মুক্তি সম্ভব নয়। অবশ্যই জনগণের পক্ষে গণ অভ্যুত্থানে পাওয়া দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে উপদেষ্টারা সেফ এক্সিট পেতে পারেন।
গতকাল দুপুরে রংপুর নগরীর শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের দীর্ঘ সময়ের কার্যকলাপ দেখে মনে হচ্ছে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যেতে চান। সেফ এক্সিট নেওয়ার মানসিকতার সেই জায়গা থেকে পরিবর্তন যেন আসে, জনগণ তাদের যে দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করেছে, সেই দায়িত্ব পালনে যেন কোনো ধরনের ফাঁকিবাজি তৈরি না হয় এটি আমাদের প্রত্যাশা। উপদেষ্টাদের পলায়নপর মানিসকতায় সেফ এক্সিট নিয়ে তারা শুধু ক্ষমতা হস্তান্তর করে বেঁচে যাবে বিষয়টি এমন নয়।
আখতার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য সফল করতে খুন, গুম, আয়নাঘরে বন্দি রাখার সঙ্গে জড়িত সেনাবাহিনী, ডিজিএফআই, র্যাবের যেসব সিনিয়র কর্মকর্তা যুক্ত ছিলেন তাদের অনেকের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। জুলাই সনদে স্বাক্ষর বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে সরকার তাদের তরফ থেকে আশ্বস্ত করেছে। আগামীতে গণভোটের মাধ্যমে সংসদকে ক্ষমতা দিয়ে সেগুলো টেকসইভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার কথা সরকার ও ঐকমত্য কমিশন থেকে জানানো হয়েছে। জুলাই সনদের অর্জনকে ধারণ করতে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এনসিপি অংশ নেবে। সরকার যেন জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো বিতর্কিত একপেশি আচারণ কিংবা কোনো একটি দলের হয়ে কথা না বলে।
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতিতে যে জায়গাগুলো সুনির্দিষ্ট হয়নি, সেই জায়গায় সরকার যেন কোনো দলের দ্বারা নির্ধারিত না হয়ে জনগণের প্রত্যাশার জায়গায় সত্যিকারের আইনি ভিত্তি দিতে কাজ করে।
সংসদ নির্বাচনে জোট গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনসিপির পক্ষ থেকে কোনো দলের সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়নি। আমরা মনে করি, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায়, দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য যদি কারও সঙ্গে জোটের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তাহলে আদর্শিক জায়গা থেকে প্রয়োজন বিবেচনায় সেই ধরনের জোটের জন্য আমরা ওপেন রয়েছি।
আখতার হোসেন বলেন, সংসদ নির্বাচনের আগে যদি মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা না যায়, বিচার ও সংস্কার দৃশ্যমান করা না হয়, তাহলে নির্বাচনের মহাউৎসব অর্জন করা সম্ভব হবে না। নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রস্তুতি ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দলের কাছে ও জনগণের কাছে যেন গ্রহণযোগ্য হয়, এ ক্ষেত্রে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপি জেলার আহ্বায়ক আসাদুল্লাহ গালিব, যুগ্মআহ্বায়ক আলমগীর নয়ন, আলাল উদ্দিন কাদেরী শান্তি প্রমুখ। এর আগে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন নগরীর ছোট নুরপুর কবরস্থানে সদ্যপ্রয়াত রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুর কবর জিয়ারতসহ তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বিকালে পীরগাছা উপজেলার নব্দীগঞ্জ বাজারে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন আখতার হোসেন।