বাংলাদেশ থেকে ভারতে পদ্মার ইলিশ রপ্তানির বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত। ফলে চলতি মৌসুমে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের বাজারে ইলিশপ্রেমীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। মৌসুম শুরু হলেও ভারতমুখী রপ্তানির বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা মেলেনি। এতে করে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না কলকাতার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের ক্রেতারা তাকিয়ে আছেন মিয়ানমার ও গুজরাটের ইলিশের দিকে। যদিও এসব ইলিশের মান বাংলাদেশের পদ্মার তুলনায় নিম্নমানের হলেও চাহিদা মেটাতে আপাতত সেখানকার মাছই বিকল্প হয়ে উঠেছে।
ইতিমধ্যে গুজরাটের নর্মদা নদীর মোহনা ও আরব সাগর থেকে ধরা ইলিশ কলকাতায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। গত পাঁচ দিন ধরে গড়ে প্রতিদিন পাঁচটি ট্রাকে প্রায় ৬০ টন মাছ আসছে। এর মধ্যে ডিমওয়ালা ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯০০-১০০০ রুপিতে এবং ডিম ছাড়া ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৪০০ রুপিতে।
এছাড়া, মিয়ানমার থেকেও হিমায়িত ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের বাজারে আসছে। স্থানীয় আড়তদাররা এসব মাছ কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ করছেন। মিয়ানমারের ইলিশ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৬০০ রুপিতে। হাওড়া পাইকারি মাছ বাজারের সভাপতি সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ৬২৫ টন মিয়ানমারের ইলিশ সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি ডায়মন্ড হারবার ও দিঘা থেকে স্থানীয়ভাবে ধরা ইলিশও বাজারে উঠছে। ৪৫০-৫০০ গ্রাম ওজনের এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ রুপিতে। ১ কেজি ওজনের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১৮০০ রুপি পর্যন্ত পৌঁছেছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিস্থিতির কারণে কলকাতার ইলিশ ব্যবসায়ীরা এবার বাধ্য হয়ে মিয়ানমারের ইরাবতী ও গুজরাটের নর্মদা নদী থেকে ইলিশ সংগ্রহ করছেন। আগে পদ্মা বা কোলাঘাটের রূপনারায়ণ নদীর ইলিশকেই বেশি পছন্দ করা হতো। সেগুলোর স্বাদ ও গুণগত মান এখনও শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়।
প্রথাগতভাবে দুর্গাপূজার আগে বাংলাদেশের পদ্মা থেকে ইলিশ কলকাতায় যায়, যার দাম তুলনামূলক বেশি হলেও স্বাদের কারণে তা ইলিশপ্রেমীদের কাছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। পদ্মার ইলিশ কলকাতার বাজারে কেজিপ্রতি ১৮০০-২২০০ রুপিতে বিক্রি হয়েছিল।
এবার মিয়ানমার থেকে আসা এক কেজি থেকে ১.২ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৩০০-১৪০০ রুপিতে। ১.৩ থেকে ১.৫ কেজি ওজনের বড় ইলিশের দাম প্রতি কেজি ১৫০০ রুপি।
লেক বাজারের মাছ ব্যবসায়ী অমর দাস বলেন, ‘কলকাতার মানুষ এখন ডায়মন্ড হারবারের ইলিশের প্রতিই বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে আগে পদ্মার ইলিশ এলে সবাই সেদিকেই ঝুঁকে যেত। এবার সেই আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশ হয়তো এবার কোনো ইলিশ পাঠাবে না।’
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ