যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব পেতে রেকর্ডসংখ্যক আমেরিকান আবেদন করেছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে প্রায় ১,৯৩১ জন আমেরিকান ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন। ২০০৪ সালে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের (হোম অফিস) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই তিন মাসে আবেদনসংখ্যা গত বছরের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। এর আগেই, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে, ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নাগরিকত্বের আবেদনের হার বেড়ে যায়।
২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়া আমেরিকান নাগরিকের সংখ্যাও ছিল রেকর্ড পর্যায়ে। ‘সেটেলড স্ট্যাটাস’ (স্থায়ী বসবাসের অনুমতি) পাওয়ার মাধ্যমে কেউ অনির্দিষ্টকালের জন্য যুক্তরাজ্যে থাকা, কাজ করা ও পড়াশোনা করার সুযোগ পান। পরে এই স্ট্যাটাস থেকে নাগরিকত্বের আবেদনও করা যায়। ২০২৪ সালে ৫,৫০০-এর বেশি আমেরিকান এই অনুমতি পান, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।
এর আগেও ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, অর্থাৎ ২০২০ সালে, কোভিড-১৯ মহামারির সময় ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্য আমেরিকানদের আবেদন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গিয়েছিল। একই সময়ের আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে ৫,৮০০ জনের বেশি আমেরিকান তাদের নিজ দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন, যা ২০১৯ সালের পুরো বছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ।
লন্ডন ও নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক কর ব্যবস্থাপনা ফার্ম বামব্রিজ অ্যাকাউন্ট্যান্টস-এর পার্টনার অ্যালিস্টার বামব্রিজ সিএনএন-কে জানান, এরা মূলত সেই মানুষ যারা আগেই যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন, এবং এখন স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কেউ কেউ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও কোভিড মোকাবেলার পদ্ধতি নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। তবে বড় একটি কারণ ছিল জটিল করব্যবস্থা।
তবে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপে পাড়ি জমানো এখন আগের তুলনায় কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, বৈধ অভিবাসীদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার শর্ত আরও কঠোর করা হবে এবং অপেক্ষার সময় বাড়ানো হবে।
ইতালিও সম্প্রতি নাগরিকত্ব নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, পূর্বপুরুষের (গ্রেট-গ্র্যান্ডপ্যারেন্ট) সূত্র ধরে আর কেউ নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন না। এছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের নাগরিকদের জন্য ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়াও জটিল করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কঠিন করব্যবস্থা এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের খোঁজে অনেক আমেরিকান এখন যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোতে নতুন জীবন শুরু করতে চাইছেন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল