বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আজ শনিবার সকালে দেওয়া এই পোস্টে প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমদকে নিরাপত্তা বাহিনী অপহরণ, নির্যাতন এবং সীমান্ত পার করে দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই তিনি গোপন স্থান থেকে বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। তখন আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালাচ্ছিল। খালেদা জিয়াকে গুলশানের অফিসে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল। দলের শীর্ষ নেতারা অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান, কেউ বা ধরা পড়েন পুলিশের বিশেষ বাহিনী, র্যাবের হাতে। আমি এবং আমার দক্ষিণ এশিয়া প্রধান ক্রিস অটন ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির পক্ষ থেকে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসনের সঙ্গে গোপনে খালেদা জিয়ার অফিসে প্রবেশ করে তার সাক্ষাৎকার নিই। সেখানে দায়িত্বে থাকা সাদা পোশাকধারী নিরাপত্তা কর্মীরা ভেবেছিলেন, আমরা ব্রিটিশ হাইকমিশনের লোক।’
‘সেই সময় প্রতিদিন সালাহউদ্দিন আহমদের বিবৃতি পেতাম। ক্রিস এবং আমি তার বিবৃতি আমাদের রিপোর্টে নিয়মিত ব্যবহার করতাম। কারণ, সেগুলো ছিল সুগঠিত, তীব্র এবং সোজাসাপটা। আমি সবসময় মনে করতাম, রুহুল কবির রিজভী দেশের অন্যতম আবেগপ্রবণ রাজনৈতিক কর্মী। কিন্তু তার লেখা বিবৃতি জটিল বাক্যে ভর্তি থাকত। একটা ভালো, চিত্তাকর্ষক উদ্ধৃতি খুঁজে পেতে কষ্ট হতো।’
‘কিন্তু রিজভী গ্রেফতার হওয়ার পর সালাহউদ্দিন আহমদ যখন মুখপাত্রের দায়িত্ব নিলেন, তখন তার পাঠানো বিবৃতিগুলো ছিল বিএনপির ইতিহাসে সবচেয়ে সাহসী এবং জ্বালাময়ী। এগুলো যেন বিস্ফোরণ ঘটাত, সরাসরি শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাত। ভাষা ছিল কঠিন, সরাসরি এবং বারবার লক্ষ্যে আঘাত হানত। আমরা নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রে শুনেছিলাম, শেখ হাসিনা এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন যে তিনি সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড়ের নির্দেশ দেন।’
‘অবশেষে ২০১৫ সালের শুরুর দিকে সালাহউদ্দিন আহমদ অপহৃত হন এবং তাকে গুম করা হয়। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ একজন সাহসী নারী হিসেবে সেই সময় তার স্বামীর মুক্তির দাবিতে যেভাবে লড়াই চালিয়ে গেছেন, তা ছিল অভাবনীয়। তার সেই অবিরাম লড়াই এবং দৃঢ়তা— যেমনটি দেখা গেছে ‘মায়ের ডাক’-এর হাজেরা খাতুন ও তার মেয়েদের কাছ থেকেও — শেখ হাসিনার শাসনামলে এক নিদারুণ প্রতিরোধের ইতিহাস হয়ে আছে।’
‘সম্ভবত হাসিনা আহমেদের এই প্রতিবাদ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার সোচ্চার অবস্থান এবং মিডিয়ার নজরই কিছুটা হলেও সালাহউদ্দিনকে সীমান্ত পেরিয়ে শিলং পাঠানোর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।’
‘দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের অনেক তরুণ ও সহিষ্ণুতা হারানো বিএনপি কর্মী সেই সংগ্রামের দিনগুলোর কথা ভুলে গেছে। গতকাল আমরা দেখেছি কীভাবে সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য অপপ্রচার চালানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত — এই সংগ্রামগুলোই শেখ হাসিনার স্বৈরতন্ত্রকে তীব্রভাবে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগই আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের সেই সোনালি এবং গৌরবময় অধ্যায়গুলো ভুলে গেছেন। আজকের ভালো সময়গুলো আমাদের সব খারাপ স্মৃতি মুছে ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে।’
;
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ