স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তার দাবিতে খাগড়াছড়িতে অবরোধ পালন করেছে জুম্ম ছাত্র-জনতা। গতকাল ভোর থেকে অবরোধের সমর্থনে জেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করে অবরোধকারীরা। অবরোধে স্থবির হয়ে পড়ে পাহাড়ের জীবন। সাজেক ভ্যালিতে আটকা পড়েছেন প্রায় ২ হাজার পর্যটক।
দুপুর ২টায় খাগড়াছড়ি সদরে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরান কবীর উদ্দিন।
জানা গেছে, অবরোধকালে গতকাল সকাল থেকেই খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী ব্রিজ, স্টেডিয়াম এলাকা, গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়ি যৌথ খামার এলাকায় পিকেটিং করে সড়কে টায়ারে আগুন দেয়। হামলা করা হয়েছে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সেও। অবরোধের ফলে খাগড়াছড়ি থেকে দূরপাল্লার যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের যান চলাচলও। অবরোধে ঢাকাসহ দূরপাল্লার নৈশকোচের অনেক গাড়ি বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে।
খাগড়াছড়ি-সাজেক পরিবহন কাউন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. আরিফ জানান, শুক্রবার অন্তত ২০০টির বেশি গাড়ি সাজেকে গেছে। যাতে প্রায় ২ হাজার পর্যটক রয়েছেন। তবে অবরোধ চলাকালে জেলার কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি জানিয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নৈশকোচগুলো নিরাপত্তা পাহারায় শহরে পৌঁছেছে।
১৪৪ ধারা জারি, ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন : অবরোধের মধ্যে খাগড়াছড়িতে ১৪৪ জারি করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল দুপুর ২টা থেকে শুরু করে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ ১৪৪ ধারা চলবে বলে জানানো হয়। গতকাল খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ সালের ১৪৪ ধারা মতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে খাগড়াছড়িতে ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরান কবীর উদ্দিন।
উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফেরার পথে এক কিশোরী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন। স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল সকাল থেকেই জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকে শুরু হয় সড়ক অবরোধ।
ইন্ধনে পাহাড়ে শান্তি বিনষ্টের চেষ্টা : খাগড়াছড়িতে ২৭ সেপ্টেম্বরের সকাল-সন্ধ্যা সহিংস সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে মহাজনপাড়া এলাকায় পাহাড়ি যুবকরা হাতে ভারী অস্ত্র, গুলতি দিয়ে প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অস্ত্র হাতে পাহাড়ি যুবকদের একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। শহরের রাস্তায় প্রকাশ্যে পাহাড়ি যুবকদের এমন সশস্ত্র ভূমিকায় সংশয় ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে শান্তিপ্রিয় পার্বত্যবাসী। তারা বলছে, শিক্ষার্থীদের ব্যানার ব্যবহার করে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উদ্দেশ্যমূলকভাবে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ইন্ধন ও লেলিয়ে দিচ্ছে। তাদের এমন অস্ত্র হাতে আক্রমণ শহরবাসীকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। ভিডিও দেখে অস্ত্র হাতে সহিংস আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে খাগড়াছড়ি সদরে এক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি খেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।