বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনরায় পেলে বিএনপি মিলেমিশে দেশ পরিচালনা করবে। দেশের নারী-পুরুষ, ছাত্র-তরুণ, যুবসমাজসহ সর্বস্তরের জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দিন, দেশ গড়ার সুযোগ দিন। ভোট দিলে ধানের শীষে দেশ গড়ব মিলেমিশে।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক যুব সমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। ‘যুব সমাবেশের প্রত্যাশা ও বিএনপির পরিকল্পনা’ শীর্ষক সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। প্রযুক্তিনির্ভর যুবসমাজ গড়ে তুলতে দলের কর্মপরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে তুলে তারেক রহমান বলেন, প্রযুক্তি বিশ্বে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই যুবসমাজকে প্রযুক্তিগত এবং কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করার কোনোই বিকল্প নেই। দেশের তরুণ এবং যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাদের কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই বিএনপির কর্মপরিকল্পনা। দক্ষ যুবশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিএনপির নেওয়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবসম্মত এবং সময়োপযোগী। বিএনপির রাজনীতি লক্ষ্য হচ্ছে আগামী দিনে কর্মসংস্থান ও বেকারদের কর্মের ব্যবস্থা করা।
তিনি বলেন, তরুণ যুবসমাজের সৃজনশীলতা উদ্ভাবনী শক্তি এবং কর্মস্পৃহা দেশকে যেমন উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। অপরদিকে যুবসমাজে বিপথগামী হলে দেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
তারেক রহমান বলেন, ‘প্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে তরুণ ও যুবকদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং কারিগরিবিদ্যায় পারদর্শিতা এবং দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। বিশেষ করে প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনে যদি আমাদের যুবসমাজ পিছিয়ে থাকে তাহলে যুবসমাজের পক্ষে রাষ্ট্র এবং সমাজে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে না।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদি আমিন, সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ রুমি ও শরীফুল ইসলাম খান, নাট্য নির্মাতা মাসরুর রশীদ বান্নাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাফসীর, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ বক্তব্য দেন। ভবিষ্যতে জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে চলমান বিশ্বের প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহারের জন্য দেশের তরুণ-যুবসমাজকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে বিএনপি উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নিয়েছে বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তরুণ যুবশক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজেদের প্রযুক্তিশিক্ষায় দক্ষ এবং যোগ্য করে গড়ে তুলুন। আপনাদের সাফল্যযাত্রাকে সহজ করার জন্য বিএনপি সম্ভাব্য সব পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের উপায় নিয়েও কাজ করছে। বিএনপি বিশ্বাস করে প্রযুক্তিনির্ভর তারুণ্য এবং যুবশক্তি গড়তে হলে তাদের প্রযুক্তিগত কর্মদক্ষতা অবশ্যই বাড়াতে হবে, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শিখতে ও শেখাতে হবে।’
প্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিএনপির একটি বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করছে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘এই টিমে শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে তা কিন্তু নয়। এখানে বাইরের বহু বিশেষজ্ঞও কাজ করছেন। স্কুলপর্যায় থেকে শিক্ষা কারিকুলামে প্রযুক্তিবিষয়ক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। শিক্ষা কারিকুলামের বাইরে যারা রয়েছেন, তাদের প্রযুক্তিনির্ভর কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য আলাদা পরিকল্পনা করেছি। যাতে প্রশিক্ষিত হয়ে দক্ষ কর্মীতে পরিণত হতে পারে। বিদেশি ভাষা শিক্ষাসহ বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে দেশে-বিদেশে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। সারা দেশে ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটগুলোর মাধ্যমে প্রযুক্তি এবং কারিগরি শিক্ষাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’
বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের আন্তর্জাতিক পেমেন্ট-পদ্ধতি সহজ করতে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে সুযোগসুবিধা কীভাবে দেওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে কাজ চলছে। যেসব প্রকল্প নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবে তাদের সহজ শর্তে অর্থনৈতিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।
তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বাস করে, প্রচলিত যে স্লোগাননির্ভর রাজনীতির দিন এখন ফুরিয়ে এসেছে। জনগণ প্রচলিত রাজনীতির একটা পরিবর্তন চাইছে। জনগণ আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য প্রতিশ্রুতি নয় বরং বিএনপি বিশ্বাস করে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন। এই কারণে প্রতিটি সেক্টরে পরিকল্পনাগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটাই আমরা পরিকল্পনার কাজ করছি। জনগণের রায় বিএনপি রাষ্ট্রীয় পরিচালনার সুযোগ পেলে সামনের দিনে আমরা এই পরিকল্পনাগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করব ইনশাল্লাহ।’ বিএনপির জনমুখী গণমুখী কর্মপরিকল্পনাগুলো দেশের সবার সামনে, জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য নেতা-কর্মীদের কাছে আহ্বান জানান। তারেক রহমান বলেন, ‘সাধারণভাবে একটা দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি যখন কর্মক্ষম শ্রমশক্তি থাকে সেটি হলো কিন্তু ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। এই জনসংখ্যা দেশের উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে। কারণ বয়সের হিসাবে আমাদের জনসংখ্যা অধিকাংশই কর্মক্ষম। শুধু এই জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে আমাদের রূপান্তর করা প্রয়োজন।’ বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বিএনপি মনে করে যে দেশের জনসংখ্যাকে বিশেষ করে তরুণ এবং যুবশক্তিকে কারিগরিনির্ভর শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তোলা যায় তাহলে বর্তমান জনসংখ্যা দেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। দেশের এই কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে একদিকে যেমন প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় লক্ষ্য নিয়ে গড়ে তুলতে আমরা আগ্রহী। একই সঙ্গে তরুণ যুবকদের আগ্রহী একটি অংশকে খেলাধুলার পারদর্শিতা অর্জন আমাদের করানো প্রয়োজন।’ ‘নতুন কুঁড়ি’ আবারও চালু করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুবকদের মধ্যে প্রযুক্তি জ্ঞানের পাশাপাশি একটি অংশ আছে যারা খেলাধুলা নিজেদের পারদর্শী করে গড়ে তুলতে চান আমাদের সেই সুযোগটা দিতে হবে। আমাদের পরিকল্পনাটা হচ্ছে “নতুন কুঁড়ি” আবারও চালু করব ইনশাআল্লাহ। নতুন কুঁড়ির আরেকটি বিষয় আমরা চালু করব, এতে ক্রীড়াও থাকবে। খেলাগুলাকে পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ক্রীড়া শিক্ষাকেও আমরা কারিকুলামের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।’ জনগণকে আবার জাগিয়ে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গ্রামগঞ্জে, হাটে-ঘাটে, খালের পাড়ে, খামারে-বন্দরে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে মানুষকে উজ্জীবিত করতে হবে। আবার মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে।