দেশের ব্যবসায় বিনিয়োগ নিয়ে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের দুশ্চিন্তা কমছেই না। নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ব্যবসাবাণিজ্য। গ্যাসসংকটে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পে উৎপাদন। ব্যাংক সুদহার বেড়ে হয়েছে ১৬ শতাংশ। মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি খুলতে গিয়ে মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানান জটিলতার, সেই সঙ্গে রয়েছে ডলারসংকট। কর্মতৎপরতা কমে যাওয়ায় শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে বেকার হচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক। এ ছাড়া শ্রম আইন সংস্কার নিয়েও ব্যবসায়ীদের মাঝে রয়েছে উদ্বেগ। সাহস পাচ্ছেন না নতুন বিনিয়োগে, পুরোনো বিনিয়োগও হুমকিতে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ অভ্যন্তরীণ নানান সংকটের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যবসা-বিনিয়োগ। এতে দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৫ সালের বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশ প্রতিবেদন বাংলাদেশে বিনিয়োগে বাধার পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করেছে। এগুলো হচ্ছে অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সীমিত অর্থায়ন, আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব, বিদেশি সংস্থাগুলোর জন্য অন্যায্য করের বোঝা ও দুর্নীতি। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা কমাতে ধীরে ধীরে অগ্রগতি অর্জন করা হয়েছে। যেমন বিদ্যুৎ পরিষেবা আরও ভালোভাবে নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা রয়েছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগ এখনো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসন সংস্কারের কাজ শুরু করে, কিন্তু দৈনন্দিন নিয়ন্ত্রক দৃশ্যপটের বেশির ভাগই অপরিবর্তিত রয়েছে।
শিল্পকারখানার উদ্যোক্তারা বলেছেন, নানান সমস্যায় দেশে নতুন করে বিনিয়োগের আগ্রহ নেই। ব্যাংকে সুদের হার বেড়েছে, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নেই, আইনশৃঙ্খলার সমস্যা তো রয়েই গেছে। এ ছাড়া কাস্টমসে নানান হয়রানির মুখোমুখি হতে হয় ব্যবসায়ীদের। এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এ মুহূর্তে ব্যবসাবাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে পড়ছি ব্যাংকিং নিয়ে। ব্যাংক সবচেয়ে বেশি সমস্যা তৈরি করছে। আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বিলম্বিত হচ্ছে। এর পরের সমস্যা কাস্টমস নিয়ে। তারপর গ্যাস-বিদুৎ, আইনশৃঙ্খলা। মোটা দাগে এ চার সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি বিনিয়োগসহায়ক হতে হবে। এখনো বিনিয়োগসহায়ক পরিবেশের অভাব আছে। শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে যা হচ্ছে তাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না এটা নিশ্চিত। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য অপশন কম। বিদেশে বিনিয়োগের অনেক অপশন আছে। বিনিয়োগ যা করার করেছি নতুন করে আর বিনিয়োগ করার চিন্তাভাবনা নেই।’ আর বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘পুরোনো বিনিয়োগকারীরা এখন নানান সম্যস্যায় আছেন। মূলধনি মেশিন আমদানিতে এলসি মিলছে না। নতুন বিনিয়োগে ঋণসহায়তা পাওয়া যায় না। ঝুট নিয়ে সমস্যা এখন আবার বড় আকার ধারণ করেছে। ব্যবসাবাণিজ্যে স্থিতিশীলতার বড় অভাব রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এখন অভিভাবকহীন ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কোনো একটা সমস্যা হলে কার কাছে যাবেন, কার কাছে বিচার দেবেন?’