বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকরে দেশটির বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআর অনড় রয়েছে। যদিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বরফ গলার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সেজন্য এই শুল্কহার কমানো, প্রত্যাহার কিংবা বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেওয়া তিন উপায়ে সমাধান খুঁজছে বাংলাদেশ। অবশ্য ইতোমধ্যে ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের সময়সীমা শেষ হতে যাচ্ছে ৩১ জুলাই। এ ইস্যুতে আলোচনার জন্য আগামীকাল বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যের চেয়ে অবাণিজ্যিক চুক্তিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ওয়াশিংটন। জানা গেছে, বাংলাদেশকে অনলাইনে বৈঠকের সময় দিয়েছে ইউএসটিআর। সরাসরি আলোচনা ছাড়া এ ইস্যুর সমাধান হওয়া কঠিন। এজন্য ভাচুর্য়ালি বৈঠকের শিডিউল দেওয়া হলেও শেখ বশির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল গতকাল সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে। সেখানে গিয়েই তারা অনলাইনে বৈঠকে যোগ দিয়ে সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ চাইবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য ইতোমধ্যে ৭ লাখ টন গম আমদানি ও ২৫টি বোয়িং কেনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই শুল্ক আরোপ সমস্যার সমাধানের জন্য বাণিজ্যের চেয়ে অবাণিজ্যিক ইস্যুকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তআঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু এবং কয়েকটি নন-ডিসক্লোজার চুক্তির বিষয়ে ইউএসটিআর থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয় সেগুলো শুধু সে দেশেই রপ্তানি করতে হবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব কাঁচামাল আমদানি করা হবে তা থেকে উৎপাদিত পণ্য সে দেশেই রপ্তানি করতে হবে এমন শর্ত দেওয়া হয়েছে ইউএসটিআরের পক্ষ থেকে। এসব শর্ত মেনে বাংলাদেশ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে কি না-তা নিয়ে দরকষাকষি চলছে। ওয়াশিংটনে বৈঠকে এসব বিষয়ে নিষ্পত্তি হওয়ার প্রত্যাশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউএসটিআর আমাদের ভার্চুয়াল এবং ফিজিক্যাল দুই ধরনের আলোচনার কথা জানিয়েছে। আমরা বলেছি, এটা সরাসরি আলোচনা হওয়া দরকার। কেননা এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি একটি অর্থপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এসবের গ্রহণযোগ্য সমাধান বেরিয়ে আসবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের গুরুত্ব বিবেচনায় দেশটি বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক কমিয়ে আনবে। তিনি বলেন, সময় চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইউএসটিআর ২৯ ও ৩০ জুলাই সরাসরি বৈঠকের জন্য সময় দিয়েছে।
এখন বৈঠকে শুল্ক কমানো নিয়ে সরাসরি আলোচনা হবে। এ ব্যাপারে আমরা বেশ আশাবাদী। এদিকে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য, তেলবীজ, তুলা, উড়োজাহাজ, বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, তরলীকৃত গ্যাস (এলএনজি) আমদানির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এদিকে দেশটির সঙ্গে শুধু এই রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্কের বিষয়ই নয়, এর সঙ্গে টিকফা চুক্তি, জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়াসংক্রান্ত চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে চায় বাংলাদেশ। আর যুক্তরাষ্ট্র চায় বাণিজ্য ও আন্তআঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে আপাতত নন-ডিসক্লোজার চুক্তি নিয়ে কথা বলতে। এসব বিষয়ে একমত হতে না পারলে শুল্ক প্রত্যাহারের সম্ভাবনা নেই। সে ক্ষেত্রে সামগ্রিক প্রস্তুতির জন্য আরেক দফা স্থগিতাদেশ চাইবে বাংলাদেশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬০টি দেশের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ দিনের মাথায় ৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রকে দুটি চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ। পরে ৯ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। এ সময়ের মধ্যে বেশির ভাগ দেশই আলোচনার মাধ্যমে এ ইস্যুর সমাধান করতে সক্ষম হয়েছে।