পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যায় জড়িত আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন- সজীব ব্যাপারী ও রাজীব ব্যাপারী। তারা দুই ভাই এজাহারভুক্ত আসামি। শনিবার রাতে নেত্রকোনার সীমান্ত উপজেলা দুর্গাপুরের বটতলা চায়না মোড় থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরা দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা আঁটছিল। তাদের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থানার টুনারচরে বলে জানিয়েছে ডিবি। এ নিয়ে আলোচিত সোহাগ হত্যায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ ও র্যাব। ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিন ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার আলমগীর ও মনিরের চার দিন করে রিমান্ড দিয়েছে আদালত।
এদিকে, সোহাগ হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোহাগ হত্যার ঘটনা তদন্তে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে। গত ৯ জুলাই সন্ধ্যায় মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে পাথর ও ইট দিয়ে থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ সময় লাশের ওপর লাফাতেও দেখা যায়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপরই এ নিয়ে সারা দেশে ক্ষোভ বিক্ষোভে পরিণত হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে এবং র্যাব দুজনকে গ্রেপ্তার করে। সজীব ও রাজীব ছাড়া গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- মাহমুদুল হাসান মহিন, তারেক রহমান রবিন, মো. টিটন গাজী, আলমগীর ও মনির ওরফে লম্বা মনির।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোহাগের কাছে প্রতি মাসে চাঁদা দাবি করে আসছিল গ্রেপ্তার মহিন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। সোহাগ চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় এবং ভাঙারি দোকানের দখল নিতে মহিন ও টিটন গাজী হত্যার পরিকল্পনা করে। ৭ জুলাই চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে সোহাগ ও মহিনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। ওইদিনই মহিন হত্যার পরিকল্পনা করে টিটনের সঙ্গে। এ জন্য অস্ত্রও সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু তারা সবার সামনে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে মব সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। যাতে ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা তাদের ভয় পায়। পুলিশ বলছে, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সোহাগকে হত্যা করা হয়। তবে নিহতের পরিবার বলছে, চাঁদা না দেওয়ায় সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে
সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক শেষে গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় রাজনৈতিক বা অন্য কোনো পরিচয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
হত্যার তদন্তে বিচারিক কমিশন চেয়ে রিট
মিটফোর্ডে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা তদন্তে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ এ রিট করেন। এতে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিমান্ডে আলমগীর ও লম্বা মনির
সোহাগ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মো. আলমগীর ও মনির ওরফে লম্বা মনিরের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ তাদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে, এ মামলায় ১০ জুলাই মাহমুদুল হাসান মহিনের পাঁচ দিন ও ১২ জুলাই টিটন গাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একই ঘটনায় শনিবার অস্ত্র মামলায় তারেক রহমান রবিন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।