দেশে বাড়ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গুর থাবায় চলতি বছরে মারা গেছেন ৫৪ জন। মশক নিধন নিয়ে সারা দেশে চলছে আলোচনা। কিন্তু এতো আলোচনার মাঝেও সাড়াশব্দ নেই ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের। মশক নিধনে কোনো কার্যক্রম না থাকলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। চলতি বছরে প্রকাশিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর আওতায় বাজেট শাখা থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং দপ্তর ও সংস্থার জন্য ৪৫ হাজার ২০৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে পরিচালন বাজেট এবং উন্নয়ন বাজেট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাজেটের এই তালিকায় ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের জন্য পরিচালন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছে ৯২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ৫৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দপ্তরটির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মশা মারার জন্য নেই কোনো কীটনাশক বা যন্ত্রপাতি কেনার বাজেট। বরাদ্দ আছে শুধু অফিস পরিচালনা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য। নেই গবেষণাগার, প্রশিক্ষণের সুযোগ। নেই আধুনিক সরঞ্জাম। এমনকি মশা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ বা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের ক্ষমতাও নেই। জানা যায়, রাজধানীর লালবাগের নূর ফাতাহ লেনে এক একর ৩৯ শতাংশ জমির ওপর ১৯৪৮ সালে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর প্রতিষ্ঠা করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। সে সময় ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় ভূমিকা রাখত এই দপ্তর। অনেক জনবল ছিল সে সময়। ১৯৭২ সালে দপ্তরটির ৩৩৮ জনবলসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেয় সরকার। ১৯৮৪ সালে এ বিভাগকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসা হয়। ১৯৯২ সালে হয় নিয়োগবিধি। সর্বশেষ ২০১১ সালে ৬৩ জন কর্মচারী নিয়োগ পেলেও এরপর আর কোনো নিয়োগ হয়নি। ২০০৯ সালে দপ্তরের অর্গানোগ্রাম সংশোধন করে প্রশাসনিক পদ সৃষ্টি করা হলেও, তা আজও গেজেটভুক্ত হয়নি। ফলে পুরোনো কাঠামোতেই চলছে কার্যক্রম। উন্নত গবেষণা, ডেটা বিশ্লেষণ বা কীটনাশকের কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য নেই কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক অবকাঠামো। এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে বাহকবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ন্যাশনাল ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিষ্ঠান জরুরি ছিল। এ প্রতিষ্ঠানকে এভাবে গড়ে তোলার সুযোগ ছিল। ২০১৯ সালে আমি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এ রকম একটা রূপরেখা দিয়েছিলাম। বেশ কয়েকটা মিটিংও হয়েছিল। এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই।’
বর্তমানে দপ্তরটিতে ২০০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মচারীরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে যুক্ত। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে রয়েছেন ১০৬ জন, এর মধ্যে ১২ জন সুপারভাইজার, একজন ইনসেক্ট কালেক্টর এবং ৯৩ জন মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মী (ক্রু)। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কর্মরত ৭৫ জন, সবাই ক্রু পদে। তারা সকাল ও বিকালে দুই বেলা ‘লার্ভিসাইডিং’ (পানির উৎসে মশার লার্ভা ধ্বংস) এবং ‘এডাল্টিসাইডিং’ (উড়ন্ত মশা নিধন) কাজে নিয়োজিত। বাকিরা দপ্তরের প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মশা নিধন করা প্রধান কাজ হলেও তাদের কোনো ক্ষমতা নেই। সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী মশা মারার ওষুধ ছিটাতে হয়। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে মশক নিবারণী দপ্তর।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরকে সক্রিয় করতে সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। এটাকে গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা সম্ভব কি না এ বিষয়ে যারা মশক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে গবেষণা করেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। নইলে অর্থ এবং জনবলের অপচয় হবে।