বাংলাদেশে বেসরকারি খাত পিছিয়ে রয়েছে। এ খাতের উন্নয়নে খুব বেশি জোর দিতে হবে। তা ছাড়া এফডিআই আরো বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। এ মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সফররত বিশ্বব্যাংকের নবনিযুক্ত দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট।
তিনি গতকাল সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে এমন মন্তব্য করেন। পরে অর্থ উপদেষ্টা তা সাংবাদিকদের জানান।
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশকে যত ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
একই সঙ্গে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সহযোগী সংস্থা আইএফসিওর বেসরকারি খাতে সহায়তা বাড়ানোর কথাও বলেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে। সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ঢাকায় এসেছেন। বাংলাদেশকে যে ধারাবাহিক সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক তা অব্যাহত রাখবে।
বিশেষ করে বাজেট সাপোর্ট অব্যাহত রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশ এক বছর আগে অর্থনৈতিকভাবে যে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল সেখান থেকে উত্তরণ হচ্ছে। এটা আর্থিক খাতে খুব বড় সাফল্য।
তিনি বলেন, আইএফসি ৫০০ মিলিয়ন ডলার নিয়মিত সহায়তা ও দেড় বিলিয়ন ডলার ট্রেড ফাইন্যান্স দিচ্ছে। আর টাকা বন্ডেও বিনিয়োগ করবে।
এ ছাড়া ইটকলকে বিশেষ সহায়তা দেবে আইএফসি। এর মধ্যে ২৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত প্রাথমিক সহায়তা, ছাদে সোলার স্থাপনে আলাদা সহায়তা দেবে আইএফসি। সার্বিকভাবে বিশ্বব্যাংক ও আইএফসি এখন সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
সংস্কার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা বলেছি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আলাদা হয়ে যাচ্ছে। আরো কিছু সময় লাগবে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা এনবিআর আলাদা করতে পারব। চট্টগ্রাম বন্দরসহ আরো নতুন বন্দরের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। লালদিয়া পোর্ট স্থাপন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এনবিআর দুই ভাগ হয়ে গেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি আলাদা কার্যক্রম শুরু হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগ তখন আলাদাভাবে কাজ করবে। এখন এ বিষয়ে কমিটি কাজ করছে। তারা সবার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন দেবে। তার পর আমরা পদক্ষেপ নেব। আলোচনার ভিত্তিতে রাজস্ব নিয়ে দুটি বিভাগ বাস্তবায়নের পথে আছে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ইউএস শুল্ক নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু এখনই বলা যাবে না। বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল আসছে। তারা আসার পর বলবে কোন কোন যায়গায় কী কী আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। আমাদের দিক থেকে আমরা দেখব, এখানে করনীতি অর্থ মন্ত্রণালয় দেখবে। এর বাইরে কিছু ইস্যু অন্যান্য মন্ত্রণালয় দেখবে। সবাই মিলে যা করণীয় নির্ধারণ হবে।’
বৈঠকে বিশ্বেব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জিন ডি. পেসমি, আইএফসির কান্ট্রি ব্যবস্থাপক মার্টিন হল্টম্যান, বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ সুলেমানে কুলিবালি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বব্যাংকের নবনিযুক্ত দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোহানেস জুট চার দিনের এই সরকারি সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল