দেশে প্রথমবারের মতো জেনেটিক ও মলিকুলার ক্যানসার শনাক্তকরণে পূর্ণাঙ্গ ল্যাব চালু করল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টিএমএসএস। গতকাল বগুড়া প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিএমএসএস কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানায়। এ বায়ো-মলিকুলার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করে স্বাস্থ্য খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছে টিএমএসএস।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বগুড়া সদরের ঠেঙ্গামারা এলাকায় এক শয্যার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতালের ১৮ তলায় স্থাপিত অত্যাধুনিক এ ল্যাবটিতে ব্যবহার হচ্ছে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং (এনজিএস) প্রযুক্তি। যা ক্যানসার নির্ণয়ে বিশ্বের সর্বাধুনিক জিনভিত্তিক প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচিত। এ ল্যাব প্রতিষ্ঠায় স্বাস্থ্য খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। এটি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যা ক্যানসার রোগ শনাক্ত ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। এর ফলে বিদেশে গিয়ে ব্যয়বহুল জেনেটিক টেস্ট করার প্রয়োজন অনেকাংশেই কমে আসবে। বগুড়া প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিএমএসএস প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম, টিএমএসএস উপনির্বাহী পরিচালক ডা. মো. মতিউর রহমান, চেয়ারম্যান ও সিইও মিহেলথ অমিক্স অস্ট্রেলিয়া, জিং-টেকনোলজিস প্রফেসর ড. পল মেইনওয়ারিং, এমডি জিং-টেকনোলজিস মোসাদ্দেক শহীদ, মান নিশ্চিতকরণ বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শদাতা, মেডিকেল ল্যাব আইএসও পরিদর্শক মি. প্যাট্রিক মাতেটা, আইএসও স্ট্যান্ডার্ড রাইটার এবং মেডিকেল ল্যাব আইএসও পরিদর্শক মিসেস শিলা উডকক, সহকারী অধ্যাপক প্রমুখ। এবং কিউসি ব্যবস্থাপক টিবিএল ড. ফরহাদ আহমেদসহ বিভাগীয় প্রধান ও কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে টিএমএসএস প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপিকা ড. হোসনে আরা বেগম বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১.৬ লাখ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ১০-১৫ শতাংশ ক্যানসার জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। বিশেষ করে স্তন, ডিম্বাশয়, অন্ত্র, থাইরয়েড ও রক্তের ক্যানসারের সঙ্গে বিভিন্ন জিনের পরিবর্তন জড়িত। এ ল্যাবে ওইসব জেনেটিক মিউটেশন শনাক্ত করে চিকিৎসকরা রোগীর জন্য সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর চিকিৎসা নির্ধারণ করে থাকেন। টিএমএসএসের ল্যাবে ব্যবহৃত হচ্ছে রিয়েল-টাইম পিসিআর, জেনেটিক অ্যানালাইজার, ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি এবং লিকুইড বায়োপসিসহ অত্যাধুনিক পরীক্ষণ প্রযুক্তি। সর্বোপরি, উচ্চমানের এনজিএস বা নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্তকরণ এখন আরও দ্রুত, নির্ভুল ও সাশ্রয়ী। ল্যাবটি আন্তর্জাতিক মানের হলেও পরীক্ষাগুলোর খরচ বিদেশি ল্যাবের তুলনায় অনেক কম। ভবিষ্যতে আরও কম মূল্যে এসব পরীক্ষা সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে।
টিএমএসএস দেশের উত্তরাঞ্চলের জনসাধারণের জন্য সুলভ মূল্যে অত্যাধুনিক ক্যানসার চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০২২ সাল থেকে বগুড়ায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সুপার স্পেশালাইজড ক্যানসার সেন্টার পরিচালনা করছে। এটি একটি কমপ্রিহেনসিভ ক্যানসার কেয়ার সেন্টার। যেখানে রয়েছে ক্যানসার স্ক্রিনিং, সঠিক রোগ নির্ণয় এবং সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপিসহ আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি রোগ নির্ণয়ের জন্য এখানে সিটি স্ক্যান, এমআরআই, হিস্টোপ্যাথলজি, ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি, ইমেজ-গাইডেড এফএনএসি ও কোর বায়োপসিসহ প্রায় সব প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক পদ্ধতির ব্যবস্থা রয়েছে।