বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখন গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির প্রধান টার্গেট। তারা মূলত দেশে এবং বিদেশে ষড়যন্ত্র করছে যেন বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপন না হতে পারে।
লক্ষ্য করা গেছে যে, যখনই দেশে কোনো বিষয়ে কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয় তখনই কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ছত্রছায়ায় থাকা ষড়যন্ত্রকারীরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নির্ধারণ করে। কারণ তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে পরাজিত হতে ভয় পায়। তারা জানে তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে। তারেক রহমানের ‘প্রথম বাংলাদেশ’ স্লোগান দিয়ে দেশ পুনর্গঠনের স্বপ্নই মূলত তার এবং দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অন্যতম প্রধান কারণ।
হিংসা ও ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে কয়েকটি দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যে নেতিবাচক কৌশল অবলম্বন করছে। সে লক্ষ্যে ষড়যন্ত্রকারীরা অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তার দায়িত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন সব ঘটনায় যুক্ত করছে। একই সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীরা তারেক রহমানকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার জন্যও ইস্যু তৈরি করছে।
সর্বশেষ ঘটনাবলীতে দেখা গেছে, মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদের নামে দুটি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল এবং একটি নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার চালিয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপি তার দলের কিছু নেতাকে কোনো তদন্ত ছাড়াই আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
কিছু রাজনৈতিক দল রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তারেক রহমানের নাম উল্লেখ করে অশ্লীল স্লোগান দিচ্ছে। যা অবশ্যই রাজনৈতিক ও সামাজিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। এসব প্রতিবাদ একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে সংগঠিত হচ্ছে। একই সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে অপপ্রচারও ছড়িয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে।
দেশ ও গণতন্ত্রের প্রতি ভূমিকার জন্য তারেক রহমান ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তিনি গত প্রায় ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। যা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এবং স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
তারেক রহমানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে যে, তিনি দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেন। যেকোনো অপকর্মে লিপ্ত থাকা দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সর্বদা কঠোর। তিনি সর্বদা দলের নিয়ম লঙ্ঘনকারী কর্মীদের কঠোর হাতে মোকাবেলা করেন।
দেশে অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্থিরতার সময় বিএনপির নেতা, কর্মী এবং সমর্থকরা যেন কোনো নৈরাজ্য ও সহিংস কর্মকাণ্ডে নিজেদের জড়িত না করে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন তারেক রহমান। শুধু তাই নয়, দলের কর্মীদের যেকোনো অপকর্মের বিরুদ্ধে সর্বদা কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছেন। যখনই তিনি কোনো অপরাধমূলক বা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দলের কোনো কর্মীর জড়িত থাকার খবর পান তখনই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি পটুয়াখালী জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে ভাষণ দিতে গিয়ে তারেক রহমান বিএনপি নেতাকর্মীদের এমন কিছু না করার আহ্বান জানান, যা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে। সেখানে তিনি বলেন, আপনি যদি এমন কিছু করেন যা মানুষের অপছন্দের, তাহলে প্রতিটি নেতাকর্মী, এমনকি দলকেও এর নেতিবাচক প্রভাব বহন করতে হবে। এজন্য আমি বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার প্রতিটি নেতাকর্মীকে এমন কোনো কার্যকলাপে লিপ্ত না হওয়ার আহ্বান জানাই যা আমাদের বিরুদ্ধে জনসাধারণের ক্ষোভের কারণ হতে পারে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের তাদের ভালো কাজ এবং ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে জনসাধারণের আস্থা অর্জনের আহ্বান জানান। সেইসঙ্গে সহনশীলতা অনুশীলন এবং ভিন্ন মতামতকে সম্মান করার আহ্বান জানান। এর পাশপাশি বলেন, প্রশাসন যদি সহযোগিতা চায়, তাহলে বিএনপি নেতাকর্মীদের তাদের নিজ নিজ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করতে হবে।
তারেক রহমান সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের যেকোনো অপকর্মের বিরুদ্ধে সবসময় কঠোরতা প্রদর্শন করছেন। অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে দলটি কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। এর পাশপাশি এক হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করেছে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
দুর্ভাগ্যবশত, দলটি আন্তরিকতা দেখালেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুর্বলতা দেখাচ্ছে। অন্যদিকে অপরাধীরা প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে অপরাধ করছে।
বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বীরা তারেক রহমানের উপর গুরুতরভাবে অসন্তুষ্ট। কারণ তিনি দেশকে গণতন্ত্রে রূপান্তরিত করার জন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য আওয়াজ তুলে আসছেন। সে লক্ষ্যে দেশের জনগণ এবং ফ্যাসিবাদ-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় ১৭ বছর সংগ্রাম করেছে।
অন্যদিকে, কিছু রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দাবি করে আসছে তারা সংস্কার এবং জুলাই সনদ ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেবে না। তবে রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতভেদ রয়েছে।
এই রাজনৈতিক দলগুলো আবার আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থায় জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি করছে। তাদের এই দাবি স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করবে। এই ষড়যন্ত্রে, পরাজিত ফ্যাসিস্টদের দলগুলোও অবদান রাখছে।
অন্যদিকে, বিএনপি সংসদীয় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। দলটি বলছে, নির্বাচিত সংসদ সংস্কার বাস্তবায়ন করবে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে, ১/১১-এর পটপরিবর্তনের সময় তারেক রহমান গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির দ্বারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। তার তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে ওই শক্তি বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়েছিল। কিন্তু অবশেষে আদালত তাকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণিত করে এবং তিনি মামলা থেকে খালাস পেয়েছিলেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
এখন তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা তার প্রধান ‘শত্রু’ বলে মনে হচ্ছে। কারণ এবার ষড়যন্ত্রকারীরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিকভাবে ভোটের মাধ্যমে তাকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হওয়ার ভয়ে অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো তার বিরুদ্ধে সক্রিয়। তারেক রহমানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে সেই শক্তিগুলো। বিএনপিকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে সতর্ক থাকতে হব। তারেক রহমান কেবল দলের নেতাই নন বরং দেশের সম্পদ এবং একটি নতুন বাংলাদেশকে উন্নত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপরিহার্য।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ