রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় ৩০টি ওয়ার্ডে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের জুনে। কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ছয় মাস না যেতেই রাস্তার পিচঢালা পাথর উঠে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি সড়কে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। যা যানবাহন চলাচলে ঝুঁকিতে পড়েছেন নাগরিকরা। বর্ষার কারণে গর্তগুলোতে জমে থাকছে পানি। এতে প্রায় দুর্ঘটনায় পড়ছেন নাগরিকরা।
স্থানীয়রা বলছেন, যেসব রাস্তা নির্মাণ বা সংস্কার করা হয়েছে সেসব রাস্তায় অধিকাংশ ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে বাড়ি ভাঙা পুরোনো ইটের। আবার ওপরের অংশে যে পরিমাণ বিটুমিন ও পাথর দিয়ে কার্পেটিং করার কথা ছিল, সেখানেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ফলে ছয় মাস না যেতেই ওয়ার্ড পর্যায়ের ওইসব রাস্তার কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। সরেজমিন রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, ড্রেন, ফুটপাত ও রাস্তা নির্মাণ বা সংস্কারের সময় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঠিকাদাররা ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। এলাকাবাসীর পক্ষে নগর কর্তৃপক্ষ ও রাসিকের প্রকৌশলীদের ফোন করে বারবার অভিযোগও করা হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। উল্টো ঠিকাদাররা ইচ্ছামতো কাজ করে গেছেন দাপটের সঙ্গে। কারণ সব কাজেরই দেখভাল করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তাদের দাপটে ঠিকাদাররা দায়সারা কাজ করে সরকারি অর্থ লোপাট করেছেন। নগরীর বিলসিমলা এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি মাত্র মাস দুয়েক আগে নির্মাণকাজ শেষ করেছে ঠিকাদার। ওই সময় রাস্তায় যেসব খোয়া ফেলানো হয়েছিল, তার অধিকাংশই ছিল বাড়ি বা রাস্তার পুরোনো ইটের খোয়া। আবার এক ইঞ্চিও পাথর দেওয়া হয়নি কার্পেটিংয়ের সময়।’
সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন তিনটি প্যাকেজে আটটি ওভারপাস বা ফ্লাইওভার ও ১৯টি ছোট-বড় অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলমান আছে। এ ছাড়া চলমান আছে ৮৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া লেভেল ক্রসিংয়ে ও ওভারপাস নির্মাণকাজ, ১১৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কোর্ট স্টেশন রেলওয়ে ক্রসিংয়ে ৫২১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ ওভারপাস, ২০৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদ কামারুজ্জামান চত্বর লেভেল ক্রসিংয়ে ৮৯৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ ওভারপাস নির্মাণ, ২৯১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বন্ধ গেট এবং নতুন বিলসিমলা লেভেল ক্রসিং পর্যন্ত ১ হাজার ২৫৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১২ মিটার প্রস্থ সমন্বিত ওভারপাস নির্মাণকাজ। এরই মধ্যে প্রকল্পগুলোর ২৫-৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে এসব কাজেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন জানান, ইতোমধ্যে সড়কগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে দরপত্র আহ্বান করা হবে।