বিশিষ্ট শিল্পপতি এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী (৮৩) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল সকালে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। আহমেদ আকবর সোবহান তাঁর শোকবার্তায় বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ ও আমার পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর জীবন ও কর্ম আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার বিরাট উৎস হয়ে থাকবে।’ তিনি সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর পরিবার যেন এ শোক দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্য দোয়া করেন। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তাঁর পাশে ছিলেন ছেলে সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর ও মেয়ে মুনিজে মঞ্জুর। তাঁর লাশ দ্রুত দেশে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। ২০২০ সালের ২৬ মে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর স্ত্রী ও সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
আজ সকাল ১০টায় সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর লাশ নিয়ে যাওয়া হবে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে। সেখানেই হবে মরহুমের প্রথম জানাজা। এরপর বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাঁকে বনানী কবরস্থানে স্ত্রী নিলুফার মঞ্জুরের কবরে দাফন করা হবে বলে জানান সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান। এ ছাড়া তিনি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং গ্রে অ্যাডভারটাইজিং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭২ সালে মঞ্জুর ইন্ডাস্ট্রিজ নামে কোম্পানি করে কমিশনের ভিত্তিতে চামড়া বিক্রির ব্যবসায় নামেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। চার বছর পর ১৯৭৬ সালে ১২ লাখ ২২ হাজার টাকায় রাষ্ট্রমালিকানাধীন ওরিয়েন্ট ট্যানারি কিনে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এপেক্স ট্যানারি। তারও ১৪ বছর পর যাত্রা করা এপেক্স ফুটওয়্যার এখন দেশের শীর্ষস্থানীয় জুতা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তখন তিনি যোগাযোগ, নৌপরিবহন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালেও তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তখন তিনি কৃষি, নৌপরিবহন, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসবের বাইরে সংগঠক হিসেবেও অনেক কাজ করেছেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তিনি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ঢাকার সভাপতি ছিলেন। ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যও তিনি। ১৯৪২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর জন্ম। তাঁর বাবা স্যার সৈয়দ নাসিম আলী (১৮৮৭-১৯৪৬) কলকাতা হাই কোর্টের বিচারক নিযুক্ত হন ১৯৩৩ সালে। এর এক যুগ পর তিনি প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী লেখাপড়া করেন কলকাতার স্কুল-কলেজে। ১৯৬২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৬৪ সালে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অজন্য করেন।
শোক প্রকাশ : সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি তাসকীন আহমেদ এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। শোকবার্তায় তাঁরা গভীর শোক প্রকাশ করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।