গত তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের পানির ঢলে কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি ক্রমেই বেড়ে গেছে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বাড়লেও বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এ মুহূর্তে বন্যার কোনো আশংকা নেই বলে জানায় অফিস।
এদিকে, জেলার রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে চর ও ডুবোচরের ক্ষেতগুলো ডুবে গেছে। বর্ষণে হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। এতে বড় লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
কুড়িমের রাজারহাটে হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে চরাঞ্চলের ফসলের ক্ষেত। উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চরাঞ্চল কিশোরপুরে বেশ কটি চরের বাদাম ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে বাদামের গাছগুলো পচে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। দ্রুত পানি সরে না গেলে নষ্ট হতে পারে বলে কৃষকদের মাথায় এখন দুশ্চিন্তা।
অপরদিকে,রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে সেখানে চরাঞ্চল ডুবে গেছে। কৃষকরা তাদের অপরিপক্ক বাদাম ও মরিচসহ বেশ কয়েকটি ফসল পানি থেকে তুলে আনছেন। ভারতের গজলডোবা দিয়ে পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় এ অঞ্চলে পানি বেড়ে গেছে বলে চরাঞ্চলবাসীরা জানান।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে তিস্তা নদীর জেগে উঠা চরে চিনাবাদাম ১৭৫ হেক্টর, পাট ২০ হেক্টর, মরিচ ৩ হেক্টর, শাক-সবজি ৫ হেক্টরসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হয়। কিন্তু তিস্তা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে এসব রবিশস্য পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।
এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, হঠাৎ তিস্তার পানি বেড়ে চরের বাদাম ক্ষেতসহ শস্য তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের নামার চর পানিতে ডুবে গেছে। কৃষকদের উঠতি বাদাম দ্রুত তুলে নিতে পরামর্শ দিচ্ছি।
উলিপুর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়,উপজেলায় বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৬৫ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি চলতি বছর অর্জিত হয়েছে এ উপজেলায়। অনেক চরে জেগে ওঠা বালুমাটিতে বাদাম চাষ উপযোগী। এ অঞ্চলের মানুষজন বাদাম চাষে লাভবান হওয়ায় চরে প্রতিবছর বাদাম চাষ করে থাকেন।
থেতরাই ইউনিয়নের কৃষক মমিনুল ইসলাম জানান, তিস্তা নদীর পানি বেড়ে আমাদের অনেক কৃষকের চরের বাদাম ও মরিচ তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি না কমলে অনেক ক্ষতি হবে।
এ বিষয়ে উলিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, যেহেতু বাদামগুলো পরিপক্ক হয়ে উঠেছে তাই বাদাম চাষিদের পানিতে তলিয়ে যাওয়া জমি থেকে বাদাম উত্তোলনের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হবে। সরকারিভাবে কোনো প্রণোদনা আসলে তারা তা পাবেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল