অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের আগে কম সংস্কার চায় তাহলে আগামী ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি একটু বেশি সংস্কার চায় তাহলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক দুই মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম ও ড্যানিলোইচ গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস কূটনীতিকদের বলেন, ‘ছয়টি কমিশনের সুপারিশ করা সংস্কারের বিষয়ে সংলাপ শেষ হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে।’ জুলাই সনদ আমাদের পথ দেখাবে- এমন মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেন, ১ জুলাই সনদে প্রদত্ত সুপারিশের কিছু অংশ অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করবে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়ন করবে রাজনৈতিক সরকার।’ দুই সাবেক কূটনীতিক দেশকে গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তা করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে তাদের প্রতিষ্ঠান রাইট টু ফ্রিডম-এর কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। এ সময় ড. ইউনূস অলাভজনক গোষ্ঠীর কাজ এবং বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সমর্থন করার জন্য দুই কূটনীতিকের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রদূত মাইলাম ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের সভাপতি এবং নির্বাহী পরিচালক। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা করে মাইলাম বলেন, জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থান বাংলাদেশে ব্যাপক সংস্কার বাস্তবায়ন এবং সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রদূত জন ড্যানিলোইচ বলেন, ভুয়া সংবাদ এবং বিভ্রান্তির হুমকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের ইতিবাচক বক্তব্য এবং গুরুতর প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সৌজন্য সাক্ষাতে বর্তমান বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট এবং বহুল নির্যাতিত মিয়ানমার শরণার্থীদের জন্য সাহায্য হ্রাসের প্রভাব, পূর্ববর্তী শাসনামলে চুরি হওয়া কোটি কোটি ডলার পুনরুদ্ধার, সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রচেষ্টা এবং আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নিয়েও আলোচনা হয়।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সিদ্ধান্ত তাদের : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, কে নির্বাচনে অংশ নেবে, সেটা ঠিক করে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া তারা (আওয়ামী লীগ) নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে। আমি তাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শান্তি-শৃঙ্খলা ও অর্থনীতি। এটি একটি ভেঙে পড়া, বিধ্বস্ত অর্থনীতি। এটা এমন কিছু যেন ১৬ বছর ধরে কিছু ভয়ানক টর্নেডো হয়েছে এবং আমরা এখন টুকরোগুলো তুলে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করছি। গত গ্রীষ্মে বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা সহিংস বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলা থেকে এসেছি। (এমন বিশৃঙ্খলা যেখানে) মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কত দ্রুত সংস্কার হয় তার ওপর নির্বাচনের এই সময়সীমা নির্ভর করছে। কারণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এসব সংস্কার প্রয়োজন। যদি আমাদের ইচ্ছামতো দ্রুত সংস্কার করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরে আমরা নির্বাচন করতে পারব। আর যদি সংস্কারের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে আমাদের আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত বছর ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর নতুন সরকারের দায়িত্ব নিতে বলা হলে তিনি চমকে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমার কোনো ধারণা ছিল না যে আমি সরকারের নেতৃত্ব দেব। আমি এর আগে কখনো সরকারি কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করিনি। এর পরও পরিস্থিতি বুঝে ঠিকভাবে কাজ করতে হয়েছিল। এরপর যখন ব্যাপারটা স্থির হয়ে গেল, তখন আমরা জিনিসপত্র গুছিয়ে নিতে শুরু করি। যার মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা এবং অর্থনীতি ঠিক করা দেশের জন্য অগ্রাধিকার ছিল।