জাকারিয়া সৌখিন। একসময়ের দাপুটে সাংবাদিক এখন পুরোদস্তুর নির্মাতা। কয়েক বছর ধরে অনলাইনে সাড়া জাগিয়েছে তার নির্মিত প্রায় সবকটি নাটক। সম্প্রতি ক্যাপিটাল ড্রামা নামের নতুন ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু হয়েছে তার ‘প্রিয় প্রজাপতি’ নাটক দিয়ে। পেয়েছেন সাফল্যও। সেসব নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে।
আপনার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল সাংবাদিকতা দিয়ে। নির্মাতা হওয়ার চিন্তাটা কখন এবং কীভাবে মাথায় আসে?
সত্যি বলতে, নাটক-সিনেমার প্রতি আমার প্রবল আকর্ষণ ছিল। তাই ছোটবেলায় উদীচী করেছি। এরপর থিয়েটারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছি। এগুলোর পাশাপাশি আমার লেখালেখির আগ্রহ ছিল। লেখালেখির আগ্রহ থেকেই মূলত পত্রিকার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলাম। তবে মূল আকর্ষণ নাটক-সিনেমার প্রতিই ছিল। কিন্তু নির্মাতা হওয়ার আগ্রহ কোনোকালেই আমার ছিল না। আমি চেয়েছিলাম শুধুই লেখক হতে, অথচ হয়ে গেলাম নির্মাতা।
একটু খুলে বলা যায় কি?
লেখালেখির আগ্রহ থেকেই নাটক লেখা শুরু। আমার লেখা প্রচুর নাটক বিভিন্ন নির্মাতা বানিয়েছেন। কিন্তু কোনো নির্মাণই আমাকে তৃপ্তি দিচ্ছিল না। প্রতিবারই মনে হতো, কী লিখলাম আর কী বানাইল! আফসোস! এই অতৃপ্তি থেকেই আমার নির্মাণে আসা।
স্ক্রিপ্ট রাইটিং দিয়ে আপনার নির্মাণ জগতে প্রবেশ। এ অভিজ্ঞতা আপনাকে একজন নির্মাতা হিসেবে কতটা প্রস্তুত করেছে?
পুরোটাই। কারণ এখনো মনে করি, আমি মূলত স্ক্রিপ্ট রাইটার। এরপর নির্মাতা। আমি প্রথমে নিজের কল্পনায় একটা ক্যানভাস তৈরি করি। এরপর সেই ক্যানভাসকে ফুটিয়ে তুলি। আমি যেভাবে ভাবি, যেভাবে গল্প বুনি সেভাবেই নির্মাণ করি। মূলত আমি নির্মাতা হিসেবে আমার লেখক সত্তার অর্ডার ফলো করি মাত্র।
আপনি যখন একটি নতুন প্রজেক্ট শুরু করেন, সবচেয়ে আগে কী ভাবেন- গল্প, দর্শক, না প্রোডাকশন?
অবশ্যই গল্প। বললাম না, আমি নির্মাতা হিসেবে আমার লেখক সত্তার অর্ডার ফলো করি। দর্শকের কথা আমার কখনোই মাথায় থাকে না। আমি আমার স্যাটিসফেকশনের জন্য গল্প বুনি এবং নির্মাণ করি।
তবে আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে, আমার গল্প-নির্মাণ সব সময় দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তাই আমার মনে হয়, যারা আমার গল্প-নির্মাণ পছন্দ করে, তাদের হৃদয় আর আমার হৃদয় একই বাগানের খেলার সাথি।
সম্প্রতি আপনি কিছু বিগ বাজেটের কাজ করছেন। এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে কী কী নতুন চ্যালেঞ্জ এসেছে?
চ্যালেঞ্জ একটাই ছিল, আমার আবদার প্রডিউসারদের মানানো। এটা তো সত্যি, আমাদের নাটকের বাজার খুবই ছোট ছিল। অথচ আমি বড় বড় স্বপ্ন দেখতাম। আসলে সবই লেখক সত্তার কারসাজি। কিন্তু আমি অবাক হয়ে দেখলাম, প্রডিউসাররা আমার পাগলামি মেনে নিতে শুরু করলেন। আর এ কারণেই বিগ বাজেটের নাটক নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। আর এসব বিগ বাজেটের নাটকই বাজার বড় করেছে।
জিরো সাবস্ক্রাইবার চ্যানেল ক্যাপিটাল ড্রামায় ‘প্রিয় প্রজাপতি’ রিলিজ দিয়ে সাফল্য পেলেন। এর রহস্য কী?
প্রথম রহস্য, আমার নির্মাণে অপূর্ব থাকলে দর্শকের আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। তারা সব সময় অপেক্ষা করে, কখন আমাদের নাটক আসবে। আর দ্বিতীয় রহস্য, আমার প্রতি প্রচুর দর্শকের ভালোবাসা রয়েছে। বলেছি তো, তাদের হৃদয় আর আমার হৃদয় একই বাগানের খেলার সাথি। সব মিলিয়ে নাটকটি দর্শক পছন্দ করেছে।
আপনার নির্মাণের বেশির ভাগই রোমান্টিক বা রোমান্টিক কমেডি জনরার। এটা কি দর্শক চাহিদা নাকি আপনার কমফোর্ট জোন?
মূলত আমি সম্পর্কের গল্প বলতে পছন্দ করি। এখন সেই সম্পর্ক প্রেমের হতে পারে, পারিবারিক হতে পারে, বন্ধুত্বেরও হতে পারে। সব ধরনের সম্পর্কের গল্প বলতেই ভালো লাগে আমার।
সত্যি বলতে, এ সম্পর্ক ভাঙার দুনিয়ায়, কিছু সুন্দর সম্পর্কের গল্প বলতে চাই আমি।
এখন ইউটিউব ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের যুগ- নাট্যনির্মাতাদের জন্য এটি কী সম্ভাবনা এবং কী চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে?
ইউটিউব বলেন আর ওটিটিই বলেন, বিষয় একটাই- ডিজিটাল সময় চলছে এখন। যাকে বলে ওয়েব কনটেন্টের যুগ।
দেখুন, প্রতিটা সময়েরই নির্দিষ্ট চাহিদা আছে। সেই কলের গান থেকে শুরু করে আজকের আধুনিকতা পর্যন্ত- সবই সময়ের চাহিদা। আর শিল্পী বা নির্মাতাদের কাজ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা। তাই চ্যালেঞ্জ নয়, বরং সম্ভাবনাই দেখি।
ভবিষ্যতে চলচ্চিত্র নিয়ে পরিকল্পনা আছে কি?
- অবশ্যই। প্রতিটি নির্মাতারই চূড়ান্ত লক্ষ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ। আমিও এই সূত্রের বাইরে নই। প্রস্তুতি চলছে। চলচ্চিত্র নির্মাণ করব একদিন নিশ্চয়ই।