বাংলাদেশের বিমান পরিবহন খাতে সক্ষমতা বাড়াতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। উদ্দেশ্য দেশের আকাশপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের আধুনিক অবকাঠামো তৈরি করা এবং বার্ষিক যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা ৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২ কোটি ৪০ লাখে উন্নীত করা।
নির্মাণের ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হলেও পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের চুক্তিসংক্রান্ত জটিলতার কারণে টার্মিনালের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর সময়সূচি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রায় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত থার্ড টার্মিনালের সফট লঞ্চিং হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং নতুন টার্মিনালের অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাপানি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে চুক্তির কয়েকটি মূল শর্ত নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, চুক্তিতে আর্থিক বিষয় জড়িত এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সব পক্ষ চেষ্টা করছে যাতে কারও স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং সরকারি স্বার্থ রক্ষিত থাকে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত করে ডিসেম্বরের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু অপারেশন শুরুর আগে কনসোর্টিয়ামের অন্তত ছয় মাস প্রস্তুতির সময় প্রয়োজন, যা সময়সূচি পিছিয়ে দিচ্ছে। চারটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দুটি সরকারি সংস্থা নিয়ে গঠিত এ কনসোর্টিয়াম ১৫ বছরের জন্য টার্মিনালের অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাবে। চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর তাদের দক্ষ জনবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা, প্রযুক্তি স্থাপন করতে হবে। এসব কাজ শেষ করতেই সময় লাগবে কয়েক মাস।
জানা গেছে, জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স স্বাধীনতার পর থেকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে আসছে। থার্ড টার্মিনাল চালু হওয়ার পরও এ দায়িত্ব বিমানের হাতে থাকবে, তবে কনসোর্টিয়ামের তত্ত্বাবধানে। এ জন্য বিমানের সঙ্গে কনসোর্টিয়ামের একটি সার্ভিস লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট (এসএলএ) স্বাক্ষর হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিসের মান নিয়ে সমালোচনা রয়েছে, যা নতুন টার্মিনালের যাত্রী অভিজ্ঞতায় প্রভাব ফেলতে পারে। বিদ্যমান দুই টার্মিনালের ক্ষমতা বছরে ৮০ লাখ যাত্রী, অথচ বর্তমানে সামলাতে হচ্ছে ১ কোটি ২০ লাখ ১ কোটি ৩০ লাখ যাত্রী অর্থাৎ প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি চাপ।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানায়, থার্ড টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ২ কোটি ৪০ লাখে উন্নীত হবে। এটি যাত্রীদের ভিড় ও দীর্ঘ অপেক্ষার সময় কমাবে এবং আন্তর্জাতিক মানে যাত্রীসেবা উন্নত করবে। কিন্তু চুক্তি চূড়ান্ত করতে দেরি হওয়ায় অপারেশন শুরুতে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। আর্থিক ও শর্তগত মতবিরোধ থাকায় চুক্তি করতে দেরি হচ্ছে। থার্ড টার্মিনাল চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিমান পরিবহন খাতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসতে পারে। তবে চুক্তিগত জটিলতা ও পরিচালনাগত প্রস্তুতির বিলম্ব যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তাহলে এ প্রকল্পের সুফল পেতে আরও সময় লাগবে। এখনই সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণই হতে পারে এর সাফল্যের চাবিকাঠি। ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত টার্মিনালটিতে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি প্রস্থান ইমিগ্রেশন বুথ, ৫৯টি আগমন ইমিগ্রেশন ডেস্ক এবং তিনটি নিবেদিত ভিআইপি ইমিগ্রেশন কাউন্টার রয়েছে।