ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করার পর রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার রাতে উত্তপ্ত ছিল ক্যাম্পাস। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিভিন্ন হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। হলের তালা ভেঙে এ মিছিলে যোগ দেন রোকেয়া হল ও অন্যান্য ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরাও। মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে একত্র হন বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এ উত্তাপের রেশ ছিল গতকালও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে কি না, তা নিয়ে গতকাল বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ বিভিন্ন হলের প্রভোস্টরাও এতে অংশ নেন। বৈঠক সূত্র জানান, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখতে গত বছরের জুলাইয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা বহাল থাকবে। হলে কোনো ছাত্ররাজনীতি চলবে না। কীভাবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ব্যাপারেও আলোচনা হয় বৈঠকে। আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গেও বৈঠক করবে বলে জানা গেছে। হলে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার পর ছাত্রদলের ঘোষিত কমিটি থাকবে নাকি বাতিল হবে, সে ব্যাপারে এখনো ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কিছু জানা যায়নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল মিছিল করেছে শাখা ছাত্রদল। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে হলপাড়া হয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসিতে) পায়রা চত্বরে অবস্থান নেয়। মিছিলে কোনো ধরনের স্লোগান দিতে শোনা যায়নি নেতা-কর্মীদের। তবে হাততালি দিতে দিতে মিছিল করেন ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা। এ সময় ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নাহিদুজ্জামান শিপন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আসন্ন ডাকসু নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে মব তৈরি করে হলগুলোয় ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা হচ্ছে।’ এদিকে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। শিবিরের ঢাবি সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ সেখানে বলেন, ‘শিবির দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে হলে রাজনীতি না হোক। আমরা চাই হলের বাইরে শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় রাজনীতি করুক। অথচ বাম সংগঠনগুলো হলে কমিটি গঠন করলেও কেউ প্রশ্ন তোলে না, এখন কেন?’ শিবির নেতা-কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় ‘দেদার’ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা আবদুল কাদের। গতকাল ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘শৃঙ্খলা কমিটি কিংবা ব্যাচ প্রতিনিধির নামে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা হলগুলোয় ছায়াপ্রশাসন জারি রেখেছেন। হলের শৃঙ্খলা কমিটির অধিকাংশই ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত। তারা অনলাইন ভোটাভুটিতে কারচুপি করে এসব প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানান, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সেটিই বহাল থাকবে এবং প্রতিটি হল প্রশাসন এ নীতিমালার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৭ জুলাই শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। তবে গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ হলে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৫৯৩ জন শিক্ষার্থী এ হল কমিটিতে পদ পেয়েছেন। এর মধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন এমন অনেকেই পদ পেয়েছেন এ কমিটিতে। এর পরই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। ছাত্রদলের হল কমিটি ঘোষণায় ক্যাম্পাসের আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি ফেরানোকে জুলাইয়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা উল্লেখ করে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতারাও জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এর নিন্দা জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা শুক্রবার রাতের মধ্যেই ছাত্রদলের এ কমিটি স্থগিত করার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। এদিকে কমিটি দেওয়ার ১৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রদলের চারটি হল কমিটির ছয় নেতাকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে দলটি। তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা বলে ছাত্রদল বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।