‘আজকের কিশোররা সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্ত, তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, যা আগে বাংলাদেশে কখনো হয়নি। এর মূল কারণ আমরা তাদের সামনে কোনো আদর্শ, মুক্তির লক্ষ্য বা আন্দোলনের পথ দেখাতে পারিনি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল শনিবার এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এ মতবিনিময়সভায় তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবীর মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী গত সপ্তাহে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির আয়োজিত প্রদর্শনীতে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত নেতাদের ছবি প্রদর্শনীর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এই চেষ্টা আরো শক্তিশালী হবে যদি বামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধ না হয়। বুর্জোয়াদের ক্ষমতা নেই যে তারা এদের উৎখাত করবে বা করতে চাইবে, কারণ তারা একই পরিবার। যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে তারাও পুঁজিবাদী, তারাও ব্যক্তিমালিকানাকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করে।’
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের করণীয় হচ্ছে সামাজিক বিপ্লবের জন্য কাজ করা। আর সামাজিক বিপ্লব কিভাবে গঠিত হবে, সে জন্য খুব বেশি দরকার হচ্ছে, যারা সামাজিক মালিকানায় বিশ্বাস করে, সেই বামপন্থীদের যুক্তফ্রন্ট গঠন করা।’
তিনি বলেন, ‘এই যুক্তফ্রন্ট ’৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট হবে না, ওই হ-য-ব-র-ল যুক্তফ্রন্ট হবে না, ওই নেজামে ইসলামের সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট হবে না। এই যুক্তফ্রন্ট হবে বামপন্থীদের। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এবং সারা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলন কতটা শক্তিশালী হয় তার ওপর।’
সভায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা আধিপত্যবাদী ভারতের ভূমিকা এত দিন নগ্নভাবে দেখে এসেছি, এখন দেখছি পিণ্ডি আর ওয়াশিংটনের ভূমিকা। কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে বুলেটকে উপেক্ষা করে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা বিজয় এনেছে। কিন্তু রক্তের দাগ না শুকাতেই তাদের মধ্যে হতাশা গ্রাস করেছে। কারণ বর্তমান সরকার বুর্জোয়া ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে সংকটের সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছে।’
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, মব সৃষ্টি করে গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। যারা গুপ্ত রাজনীতি করে, তারাই নিজেদের রাজনীতির সুবিধার জন্য মব সৃষ্টি করে অন্যদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাধ্য করছে।
বাসদ মার্ক্সবাদীর প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করলে চলবে না। বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় আসছে তারা ফ্যাসিবাদ হয়ে উঠছে, তাই আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন চলতে থাকবে।’
বিডি প্রতিদিন/এমআই